
গাইবান্ধায় এক আওয়ামী লীগ নেতার বাসা থেকে ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর নাম হাসান আলী (৩৮)। গতকাল শনিবার দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার বাড়িতে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ মাসুদ রানাকে আটক করেছে।
হাসান আলীর বাড়ি জেলা শহরের থানাপাড়া এলাকায়। অন্যদিকে দাদন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত মাসুদ রানার বাড়ি জেলা শহরের খানকা শরিফ সংলগ্ন বল্লমঝাড় ইউনিয়নের নারায়ণপুর এলাকায়।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, দাদনের সুদের টাকা আদায়ের জন্য নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাঁকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
জেলা শহরের স্টেশন রোডে একসময় জুতার দোকান ছিল হাসান আলীর। ব্যবসায় মন্দার কারণে তিনি মাসুদ রানার কাছ থেকে চড়া সুদে মোটা অঙ্কের টাকা ধার নেন। মাসুদ রানা টাকার জন্য হাসান আলীকে প্রায়ই চাপ দিতেন। তিনি পুলিশের কাছেও অভিযোগ করেন। এ নিয়ে একাধিকবার সালিসও হয়। এক পর্যায়ে হাসান আলীকে নিজ বাড়িতে আটকে রাখেন মাসুদ রানা।
হাসানের স্ত্রী বীথি বেগম জানান, গত ৬ মার্চ সকালে বাসা থেকে তাঁর স্বামীকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান মাসুদ রানা। পরের দিন অভিযোগ জানালে পুলিশ মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান আলীকে উদ্ধার করে থানায় নেয়। কিন্তু থানায় নেওয়ার পর আবারও মাসুদ রানার জিম্মায় দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর মাসুদ রানা তাঁর বাসায় হাসানকে এক মাস আটকে রেখে নির্যাতন চালান। বীথি বেগম নানা উপায়ে স্বামীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।
এ অবস্থায় গতকাল সকালে হাসান আলীর মৃত্যুর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মৃত্যুর জন্য মাসুদ রানাকে দায়ী করে তাঁর বাড়িতে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। এরপর পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
স্থানীয়রা জানায়, মাসুদ রানাকে থানায় নেওয়ার সময় হাতকড়া না পরানোয় এলাকাবাসী পুলিশের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মাসুদ রানাকে কোমরে দড়ি লাগিয়ে থানায় নেওয়ার দাবি জানায়। তাদের দাবির মুখে পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে মাসুদ রানাকে থানায় নিয়ে যায়।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মো. মাহফুজার রহমান গতকাল বিকেলে বলেন, ‘হাসান আলী আত্মহত্যা করেছেন, নাকি তাঁকে হত্যা করা হয়েছে, তা ময়নাতদন্তের আগে বলা যাবে না। এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।’
এদিকে স্থানীয় সাংবাদিকদের গতকাল একটি খুদে বার্তা দেখান হাসান আলীর স্বজনরা। বার্তাটি কয়েক দিন আগে হাসান আলী লিখেছিলেন। সেখানে লেখা আছে, মাসুদ রানা তাঁকে বাড়িতে বন্দি করে রেখে নানাভাবে নির্যাতন চালাচ্ছেন। তিনি সাদা কাগজে জোর করে সইও নিয়েছেন। তাঁর স্ত্রীকেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।