নাম সর্বস্ব লীগের ভরেছে আ.লীগ

নকীব মাহমুদ, ঢাকা:

আওয়ামী লীগে এখন ভর করেছে নাম সর্বস্ব লীগের ভূত। দলের মিছিল মিটিংয়ে একদিন এসে দলের নেতার সাথে একটি সেলফি তুলে নেতা বনে যাচ্ছে। পরদিন নিজেই খুলে বসছে দোকান। আর এসব দোকানে এখন ভরপুর আ.লীগ। বিভিন্ন নেতার আশ্রয়ে প্রশ্রয় পেয়ে এসব পাতি নেতারা দোকান খুলে ধান্দাবাজির পথও বের করেছেন। এখন এসব পাতি নেতার অনেকেই কোটিপতি। তবে এই নাম সর্বস্ব লীগকে নিয়ে এখন বিপদে পড়েছে আ.লীগ। বিশেষ করে হেলেনা জাহাঙ্গীর নামে এক নারীর চাকরীজীবি লীগের সভাপতি হওয়াকে কেন্দ্র করে এখন তোলপাড় কাণ্ড। যদিও বরাবরের মতোই আ.লীগ লোক দেখাতে সেই হেলেনাকে বহিস্কার করেছে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

কিন্তু দলের ত্যাগী নেতারা বলছেন, দুই দিন পরই আবার সেই হেলেনা জেগে উঠবে। আবারও তাকে দলে ফেরা হবে। এভাবেই ধ্বংসের পথে এখন আ.লীগ। আ.লীগ হাইব্রিডদের হাত ধরেই কবরে যাবে বলে যতো শঙ্কা তাদের।


আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আগে প্রায় আড়াইশর মতো এমন সংগঠনের নাম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছিল। তখন কিছুটা কমে এলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। দলীয় ফোরামে আলোচনা করে এসব সংগঠন ও ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে দলটি।

গত কয়েক দিন ধরে ‘লীগ’ যুক্ত নতুন আরও দুটি সংগঠনের ব্যানার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে। এগুলো হলো- ‘আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ’ ও ‘জনসেবা লীগ’। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাকরিজীবী লীগের পোস্টারে সংগঠনটির জেলা, উপজেলা ও বিদেশি শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। সংগঠনটির দাবি, গত দুই-তিন বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে অনুমোদনের চেষ্টা করছে তারা।

চাকরিজীবী লীগের সভাপতি হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি আমার যে মন্ত্রী আছেন (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক), আমার উপদেষ্টা ভাইয়া। ওই ভাইয়াকে বললাম। তিনি আমাকে বললেন, আপনি না থাকলে তো কেউ না কেউ থাকবে। দেখেন, থাকতে পারেন। এটুকুই বললো ভাইয়া। ভাইয়া আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছেন।’

হেলানা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন। চাকরিজীবী লীগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, একটা উপ-কমিটিতে থাকলে কাজ করার জন্য সবার সঙ্গে আলোচনা করতে হয়। তার কর্মকাণ্ডে উপ-কমিটি বিব্রত হয়ে তাকে সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, এগুলো আওয়ামী লীগের অনুমোদিত বা সমর্থিত কোনো সংগঠন নয়। কিছু সুযোগ সন্ধানী চক্র এসব কর্মে লিপ্ত আছে। অপরদিকে আমাদের কিছু নেতা সরল বিশ্বাসে এসব চতুর ব্যক্তিকে ছবি তুলতে, সেলফি তুলতে দেন এবং তারা (সুযোগ সন্ধানী) এসব ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা অব্যাহত রেখেছেন।

তিনি বলেন, যেকোনো নামে যেকোনো নাগরিকের সংগঠন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু এসব ব্যক্তি আওয়ামী লীগের নামের সঙ্গে নাম মিলিয়ে প্যাড সর্বস্ব সংগঠন করে আওয়ামী লীগের অর্জন ম্লান করে দিচ্ছে। এই অপ-তৎপরতা বন্ধের জন্য আওয়ামী লীগ কাজ শুরু করেছে।

আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, সর্বপ্রথম উদ্যোগ হওয়া উচিত- সস্তা প্রচারের লোভে যত্রতত্র যেনতেন কর্মসূচিতে যোগদান বা সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকা। আমাদের আশকারা পেয়ে এরা লালিত হচ্ছে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। গঠনতন্ত্রে এদের কোনো জায়গা নেই। এরা স্বার্থান্বেষী কিছু লোক আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে নিজেরা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই। কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আওয়ামী লীগের যে গঠনতন্ত্র, সেখানে পরিষ্কার উল্লেখ আছে কারা আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এরা শাহেদ, সাবরিনা, পাপিয়া- এরকম কেউ হতে পারে।

Sharing is caring!