বাংলাদেশের দুই বাহিনী এখন ব্যবসার দিকেই ঝুঁকছে। যদিও প্রথম থেকেই সকল ধরনের ব্যবসা করে আসছে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। এই বাহিনীটির প্রায় দুই শতাধিক ব্যবসা রয়েছে। সর্বশেষ তাদের ব্যবসার মিছিলে যুক্ত হলো ওষুধ। তারা এটির নাম দিয়েছে আর্মি ফার্মা। অন্যদিকে বাংলাদেশ পুলিশ পানির উৎপাদন করতো। বোতলজাত পানি তারা বিক্রি করতো। এখন এই বাহিনীটিও ব্যবসায় ঝুঁকছে। নানা পণ্য তৈরির পাশাপাশি এবার তারা বাস সার্ভিসে গেল।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবসাগুলো হলো:
ব্যাংক, হোটেল, খাবার, গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক, রিয়েল এস্টেট, পরিবহন – বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজকাল সব ধরনের ব্যবসার সঙ্গেই যুক্ত৷ আর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো চলে ‘আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট’ আর ‘সেনা কল্যাণ সংস্থা’-র অধীনে৷
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধীনে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠানটি হলো ‘ট্রাষ্ট ব্যাংক লি.’৷ বর্তমানে সারাদেশে এদের অন্ততপক্ষে ১০০টি শাখা রয়েছে৷ প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মতোই কাজ করে৷ এছাড়া ঢাকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় পাঁচতারা হোটেল র্যাডিসন-ও সেনাবাহিনীর মালিকানায়৷ রাজধানীর বাইরে চট্টগ্রামেও রয়েছে তাদের আরেকটি পাঁচতারা হেটেল র্যাডিসন ব্লু৷
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘সেনা কল্যাণ সংস্থা’ বা এসকেএস-এর অধীনে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আছে: ‘মংলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরী’, ‘ডায়মন্ড ফুড ইন্ডাষ্ট্রিজ’, ‘ফৌজি ফ্লাওয়ার মিলস’, ‘চিটাগাং ফ্লাওয়ার মিলস’, ‘সেনা কল্যাণ ইলেক্ট্রিক ইন্ডাষ্ট্রিজ’, ‘এনসেল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড’, ‘স্যাভয় আইসক্রিম’, ‘চকোলেট এন্ড ক্যান্ডি ফ্যাক্টরী’, ‘ইস্টার্ন হোসিয়ারী মিলস’, ‘এস কে ফেব্রিক্স’, ‘স্যাভয় ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরী’, ‘সেনা গার্মেন্টস’, ‘ফ্যাক্টো ইয়ামাগেন ইলেক্ট্রনিক্স’, ‘সৈনিক ল্যাম্পস ডিস্ট্রিবিউশন সেন্টার’, ‘আমিন মহিউদ্দিন ফাউন্ডেশন’, ‘এস কে এস কমার্শিয়াল স্পেস’, ‘সেনা কল্যাণ কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স’, ‘অনন্যা শপিং কমপ্লেক্স’, ‘সেনা ট্রাভেল লিমিটেড’, ‘এস কে এস ট্রেডিং হাউস’, ‘এস কে এস ভবন খুলনা’, ‘নিউ হোটেল টাইগার গার্ডেন’, ‘রিয়েল এস্টেট ডিভিশন চট্টগ্রাম’ এবং ‘এস কে টেক্সটাইল’৷
১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের ‘ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক গ্রুপে’ যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫ সদস্য৷ সেসময় ক্ষমতায় ছিলেন সেনাশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ৷ পরের বছর বাংলাদেশ পুলিশ এবং ১৯৯৩ সালে নৌ ও বিমানবাহিনী মিশনে যোগ দেয়৷
অন্যদিকে ‘আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট’ বা এডাব্লিউটি-র প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ‘ট্রাষ্ট ব্যাংক লি’., ‘ব়্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল’, ‘আর্মি শপিং কমপ্লেক্স’, ‘সেনা প্যাকেজিং লিমিটেড’, ‘সেনা হোটেল ডেভলেপমেন্ট লিমিটেড’, ‘ট্রাষ্ট ফিলিং এন্ড সিএনজি ষ্টেশন’, ‘সেনা ফিলিং ষ্টেশন – চট্টগ্রাম’, ‘ভাটিয়ারী গলফ এন্ড কান্ট্রি ক্লাব’, ‘কুর্মিটোলা গলফ ক্লাব’, ‘সাভার গলফ ক্লাব’, ‘ওয়াটার গার্ডেন হোটেল লিমিটেড চট্টগ্রাম’, ‘ট্রাষ্ট অডিটোরিয়াম এবং ক্যাপ্টেনস ওর্য়াল্ড’, ‘আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট বাস সার্ভিস’ আর ‘ট্যাক্সিক্যাব সার্ভিস’
এছাড়া রয়েছে ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল’ ও ‘আর্মি ইন্সটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিষ্ট্রেশন’৷ এর সঙ্গে সেনাবাহিনী সরাসরি নির্মাণ কাজেও যুক্ত৷ যেমন ঢাকার ‘হাতির ঝিল’ প্রকল্পটি সেনাবাহিনীই বাস্তবায়ন করে৷ এমনকি রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠান ‘মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি’ এখন পরিচালনা করে সেনাবাহিনী-ই৷
সেনা কল্যাণ সংস্থা’ গঠন হয় ১৯৭২ সালে এবং ১৯৯৮ সালে সংস্থাটিকে কোম্পানি আইনে নিবন্ধন করা হয়৷ ‘আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাষ্ট’ গঠন করা হয় ১৯৯৯ সালে৷ জানা গেছে, এবার ওষুধ ও বীমা কোম্পানিসহ আরো কিছু ব্যবসায় যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী৷
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই)-এর গভর্নমেন্ট ডিফেন্স অ্যান্টিকরাপশন ইনডেক্স-২০১৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান ‘ব্যান্ড ডি’৷ এই ‘ব্যান্ড ডি’ বলতে তারা বোঝায় ডিফেন্স সেক্টরে উচ্চমাত্রার দুর্নীতি ঝুঁকির কথা৷ আর সে জন্যই তারা বাংলাদেশের ‘ডিফেন্স’ বা প্রতিরক্ষা বাজেটকে পুরোপুরি সংসদীয় ব্যবস্থার অধীন করার সুপারিশ করেছেন৷
আর্মির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনের প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে ‘আর্মি ফার্মা’। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আর্মি ফার্মা লিমিটেড পরিচালিত হবে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) আর্মি ফার্মার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের শিমুলতলীতে অন্যতম খ্যাতিসম্পন্ন ইউরোপিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলোমেটিক কনসাল্টিং অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে আর্মি ফার্মা লিমিটেডের ফ্যাক্টরি নির্মাণের কাজ চলছে। ১০০ বিঘা জমির ওপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর এই উৎপাদন প্রতিষ্ঠানে ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন, সিরাপ, সাসপেনশন, ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি উৎপাদনের পাশাপাশি ভ্যাকসিন , বায়োটেক, প্রোডাক্ট উৎপাদনের সুবিধা থাকবে। এছাড়া মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদন সুবিধাও এ প্রকল্পে সন্নিবেশিত করা হয়েছে ।
অনদিকে পুলিশ সদস্যদের জন্য কম ভাড়ায় দূরপাল্লার যাত্রায় ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাস’ সার্ভিসের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিকেলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে রংপুরের উদ্দেশে এ সার্ভিসের প্রথম বাসটি ছেড়ে গেছে।
শুক্রবার (২৮ মে) পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া উইং থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
মিডিয়া উইং থেকে বলা হয়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘বাংলাদেশ পুলিশ বাস’ সার্ভিসের প্রথম বাসটি পুলিশ সদর দফতরের সামনে থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শনিবার (২৯ মে) বিকাল ৩টায় বাসটি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্স থেকে পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। এ রুটের ঢাকাগামী সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা এই বাস সার্ভিসের সেবা ভোগ করতে পারবেন।
পুলিশ সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এ বাস সার্ভিসের সুবিধাটি পাবেন। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যেই সব রুটে একযোগে এই সার্ভিস চালু হবে।