দোষ ঢাকতে ফেসবুকে সরব পুলিশ

নকীব মাহমুদ, ঢাকা:

ডকডাউনের প্রথম দিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের হয়রানির শিকার হয়েছেন সাংবাদিক থেকে শুরু করে চিকিৎসক এবং বিভিন্ন পেশার মানুষেরা। বিষয়টি নিয়ে সেদিন সমালোচনা ঝড় উঠলে পুলিশ সদর দফতর সেটি নিয়ে বিবৃতিও দেয় এবং তারা নিজেদের ভুলও স্বীকার করে। এর মধ্যে এক চিকিৎসককে তার জরিমানার টাকা ফেরত দেয়ার কথা জানায়। কিন্তু এরপরই শুরু হয়েছে পুলিশের দোষ ঢাকতে ফেসবুক স্টাটাস যুদ্ধ। বাংলাদশের দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যরা শুধু এই ঘটনাই নয়, অনেক ঘটনাতেই দোষ স্বীকার করেন না। উল্টো তারা দোষী পুলিশ সদস্যের পক্ষে সাফাই গান এবং তা নিয়ে স্টাটাস দেন। কিন্তু দেখায় যায়, আবার তোপের মুখে পড়ে সেই স্টাটাস তারা ডিলিট করতেও বাধ্য হন এমন নজিরও বাংলাদেশে আছে।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকাটাইমসের এক সাংবাদিক পুলিশের হাতে হেনস্তার শিকার হন। ওই সময় তাকে একটি ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয়। এ নিয়ে সাংবাদিক পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এআইজি সোহেল রানাকে প্রশ্ন করেন। কিন্তু তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। উল্টো পুলিশ একজন চিকিৎসককে হয়রানি নিয়ে নানা বানোয়াট ও ভুল মনগড়া তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

দোষ ঢাকতে ফেসবুকে সক্রিয় পুলিশ সদস্যরা:
লকডাউনের প্রথম দিনে নানা ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার রাতেই পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মো. আবদুর রাজ্জাক লেখেন,‍ ‘আমার জানামতে, চিকিৎসক বলে পরিচয়দানকারী একজন ব্যক্তি তার ফেসবুকের স্ট্যাটাসে বলেছেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন অধিক্ষেত্রের জাহাঙ্গীর গেট এলাকার চেকপোস্টে পুলিশ তাঁর গাড়ি থামিয়ে তাঁকে নাকি অপমান করেছিল। পুলিশ সদস্যরা তার পরিচয় পেয়ে ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে তাকে নাকি “কসাই” বলে গালি দিয়েছিল।’

এই স্টাটাসে তিনি ওই চিকিৎসকে কথিত চিকিৎসক বলে উল্লেখ করেছেন। অথচ সেই চিকিৎসক একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত আছেন। এভাবে পুলিশ সদস্যরা যা ইচ্ছে তাই লিখে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টায় আছেন এখনো।

ওই পুলিশ কর্মকর্তার এই স্ট্যাটাসের প্রেক্ষিতে নিচে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। একজন চিকিৎসক লিখেছেন, ‍‘সত্যি বলতে কি ভাইয়া, মাঠপর্যায়ের বাস্তব চিত্র একেবারে ভিন্ন। আমরা যে পুলিশিং চাই, সেটা এখনো অনেক দূরে। ১৪, ১৫ তারিখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ রকম হয়রানির অনেক ঘটনা ঘটেছে। রিকশা, গাড়ি নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার সময় হাসপাতাল থেকে দূরেও নামিয়ে দেওয়ার পর্যন্ত ঘটনা ঘটেছে। এটা ঠিক যে তাঁদের সবার উচিত ছিল যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা।’

এছাড়াও পুলিশের সাফাই গেয়ে ঢাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইমের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‍‍ডাক্তার ভাই বা বোনদের কর্মস্থলে যাওয়া-আসার পথে বাংলাদেশ পুলিশ কোনোভাবেই বাধা নয়, বরং সহযোগী বন্ধু। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ পুলিশ যৌক্তিক কারণ ছাড়া আপনাকে বাধাগ্রস্ত করছে না। আর যদি বাধাগ্রস্ত করেই ফেলে, তবে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার বা সহকারী কমিশনারকে ফোন দিন (ইন্টারনেটে/ অ্যাপে নম্বর আছে)।

দেওয়ান হাসান নামের একজন চিকিৎসক আবার লিখেছেন, ‌‘আমি দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষ করে এখন বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করি। আমি কখনো পুলিশের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি। মেক্সিকোর একটা প্রবাদ আছে, তুমি তার কাছে ভালো ব্যবহার আশা করতে পারে, যার সঙ্গে তুমি ভালো ব্যবহার করবে। অনেক সময় পদপদবি, অহেতুক আত্মসম্মান বোধ দুই পক্ষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটা একান্তই আমার নিজস্ব মত ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি।’

ফয়সাল হোসেন নুরুল ইসলাম নামের একজন ওই স্ট্যাটাসের নিচে লিখেছেন, চিকিৎসকদের শেয়ার করা স্ট্যাটাস দেখে তিনি নিজেও পুলিশের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার স্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি ছিলেন। জুরাইন থেকে হাসপাতালের দিকে যাওয়ার পথে একজন কনস্টেবল তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং স্ত্রীর চিকিৎসা–সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চান। তিনি ব্যাগ থেকে কাগজ বের করতে যাওয়ার আগেই একজন পুলিশ কর্মকর্তা হাজির হন।

Sharing is caring!