
করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থবির হয়ে পড়া সংসদ অধিবেশন দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিল। অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি ও বিরোধী দলের সদস্যরা মদ-জুয়ার বিস্তারে একে অন্যকে দোষারোপ করেন। জাতীয় পার্টির সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে মদ-জুয়া ও ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বিএনপির হারুনুর রশীদ দাবি করেন, ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু আলোচনার সূত্রপাত করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জাপার মশিউর রহমান রাঙ্গা।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কয়েকদিন ধরে উত্তরা বোট ক্লাব নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই ক্লাব কে করল এবং সদস্য কারা? শুনেছি ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা দিয়ে এই ক্লাবের সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা সদস্য হয়? আমরা তো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত টাকা ইনকামও করিনি।
তিনি আরও বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে মদ খাওয়া ও জুয়া খেলা হয়।
অভিজাত এলাকায় ডিজে পার্টি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে জাপার সংসদ সদস্য বলেন, রাজধানীর গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এসব বন্ধের নির্দেশ দেন।
শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করে বলেন, এটা তো বোট ক্লাব, জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার তা চালু করেছিলেন। যারা অপরাধের শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।
এ বিষয়ে বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ বলেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়েছেন এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন তা হলে আমি সংসদ সদস্য পদ ছেড়ে দেব।
তিনি বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি। এসব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত।
হারুনের বক্তব্যের সময় সরকারি দলের সদস্যরা হইচই শুরু করেন। এ সময় শেখ ফজলুল করিম সেলিম আবারও ফ্লোর নিয়ে বলেন, লাকী খানের ঝাঁকি নাচের কথা কি ভুলে গেলেন? এ ছাড়া জিয়াউর রহমান হিযবুল বাহার জাহাজ নিয়ে প্রমোদভ্রমণ করেছিলেন। বর্তমান সরকার কোনো মুসলমানকে মদের পারমিশন দেয়নি। বন্ধ করতে গেলে আপনারাই তো চিল্লাচিল্লি করবেন। বলবেন, ফরেনারদের পারমিশন লাগবে।
তরীকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, হারুন সাহেবের সদস্যপদ আজই ছেড়ে দেওয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।
পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স নেওয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনো মুসলমান যদি মদ খায় সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।