চীনের টাকার উপর সরকারের ‘লোলুপ’ দৃষ্টি

স্বাধীনতার পর থেকে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে তখনই তাদের টাকা খেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে দলটির এমপি-মন্ত্রীরা। তবে সময় এখন বদলেছে ভারত ছেড়ে চীনের গলা ধরতে শুরু করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কথাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে সরকারের লোলুপ দৃষ্টি এখন চীনের টাকার দিকে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অবকাঠামোর চাহিদা পূরণে অনেক দেশ যখন সহযোগিতা কমিয়ে দিচ্ছে, তখন চীন ‘আকর্ষণীয় ও সাশ্রয়ী’ প্রস্তাবসহ ‘টাকার ঝুড়ি’ নিয়ে এগিয়ে আসছে।

শনিবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘এ সি চেঞ্জ : রিজিওনাল অর্ডার অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন দ্য ইন্দোপ্যাসিফিক’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, জনসাধারণের চাহিদা মেটাতে তাদের আরও উন্নয়নের প্রয়োজন, অপরদিকে বিভিন্ন দেশ থেকে সহযোগিতা কমছে। তবে চীন ‘আকর্ষণীয় ও সাশ্রয়ী’ প্রস্তাবসহ ‘টাকার ঝুড়ি’ নিয়ে এগিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে বাংলাদেশ ‘বেশ ভালো’ করছে এবং এ জন্য সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাও বেড়েছে। তারা উন্নত জীবনের জন্য আরও সুযোগ-সুবিধা চায় এবং দেশে আরও অবকাঠামোগত সুবিধার চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে টাকা নেই, প্রযুক্তিও নেই।

এ সময় জাপানকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, তারা অন্যতম ভালো বন্ধু এবং দেশটি বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করছে।

পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকল্পে বাংলাদেশকে ভারত লাইন অব ক্রেডিট দিচ্ছে উল্লেখ করে ভারতকেও ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মন্ত্রী বলেন, জনগণের আরও অবকাঠামোগত উন্নয়নের চাহিদা রয়েছে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নয়ন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আরও তহবিল প্রয়োজন। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে সর্বোচ্চ ঋণ নিয়েছে।

ড. মোমেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্কর বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ‘প্রতিযোগিতামূলক’ এবং প্রতিটি দেশই সুযোগ খুঁজবে। কিন্তু সেটি করার সময় তাদের নিজের স্বার্থে বিচক্ষণ হওয়া এবং কী পাচ্ছে না পাচ্ছে সে সম্পর্কে বিবেচক হতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের অঞ্চলসহ বিভিন্ন দেশ বৃহৎ ঋণে জর্জরিত। আমরা দেখতে পাচ্ছি এমন প্রকল্প যা বাণিজ্যিকভাবে টেকসই না; বিমানবন্দর যেখানে বিমান আসে না; বন্দর যেখানে জাহাজ আসে না। আমি আশা করি, নীতিনির্ধারকরা আরও বিবেচক হবেন এবং নিজেদের জিজ্ঞেস করবেন আমরা আসলে কী পাচ্ছি? আমি মনে করি, অবহিত সিদ্ধান্ত নেওয়া আমাদের সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অবশ্যই তা খুবই প্রতিযোগিতামূলক সিদ্ধান্ত হতে হবে।

এদিকে জার্মানির মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সেশনের মাঝে সাইড লাইনে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরিস পেইন। সেখানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসেবে পশম রফতানি করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

দুই মন্ত্রীর বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানিকে কেন্দ্র করে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সফর আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন। উভয় পক্ষ অফশোর গ্যাস অনুসন্ধান এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উভয় ক্ষেত্রেই সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে। ড. মোমেন অস্ট্রেলিয়াকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেওয়ার অনুরোধ জানান। মোমেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সুবিধার্থে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পরামর্শ পুনর্ব্যক্ত করেন।

বৈঠকে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে পুনর্বাসন করার পক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন ড. মোমেন ও মেরিস পেইন। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বৈঠকে মোমেন রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের টেকসই সমাধান খোঁজার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে তার দেশের স্থায়ী অঙ্গীকারের আশ্বাস দেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন দেশ দু’টির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

Sharing is caring!