লিখেছেন নাজমুস সাকিব
বাংলাদেশের তিরিশটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে রাজনৈতিক বিষয়ে আলাপচারিতা নিয়ে প্রায় পঞ্চাশটির মতো টক্ শো চালু আছে। তার উপরে করোনাকালীন সময়ে নানাধরণের অনলাইন প্লাটফর্ম থেকেও প্রতিদিন বিভিন্ন টক্ শো বা আলাপচারিতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার পাচ্ছে। এমনি একটি প্রেক্ষাপটে মাসখানেক আগে যখন টিটো ভাই (নাগরিক টিভির সিইও) আমাকে একটি ভিন্নধর্মী টক্ শো উপস্থাপনার কথা বললেন , তখন আমি ভাবলাম এটি না জানি আবার ‘লেবু কচলাতে কচলাতে তেতো” হয়ে যাবার মতো অবস্থা তৈরী করে ফেলে !
মূলত টিটো রহমান ভাই এর অনুপ্রেরণাতেই টক্ শো ‘হার্ড টক্’ এর যাত্রা শুরু হয়েছিল মাসখানেক আগে। টিটো ভাই সূচনা থেকেই আমাদের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়েছেন। আমাদের টক্ শো হতে হবে দল নিরপক্ষে, তবে আমাদের নিজস্ব অবস্থান হবে জনগণের পক্ষে। যারা বুদ্ধিমান পাঠক বা দর্শক তারা নিশ্চই বুঝেন বর্তমান বাস্তবতায় ‘জনগণের পক্ষ’ আসলে কোনটি! তাই এ বিষয়ে আর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না।
দেখতে দেখতে ‘হার্ড টক্’ এর তিনটি পর্ব প্রচার হয়ে গেলো। এই অতি অল্প সময়ে অনুষ্ঠানটি এত বেশি জনপ্রিয়তা পাবে , এত বেশি মানুষের আপন হয়ে যাবে সেটি আমি কল্পনাও করিনি। আমি সারাজীবন যা কিছু করেছি , আন্তরিকতার সাথেই করেছি এবং নিজের সেরাটা দেবার চেষ্টা দিয়েই করেছি। নিজেকে কখনই খুব বেশি মেধাবী বা খুব বড় কিছু মনে করি না। তবে নিজের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে কাজ করি, সম্ভবত এ কারণেই বোধহয় ‘হার্ড টক্’ এত অল্প সময়ের মধ্যেই এত বেশি সাড়া পেয়ে গেলো।

বিভিন্ন অনলাইন পেজ এবং ইউটুব চ্যানেলে আমাদের প্রতিটি পর্ব যেভাবে প্রতিযোগিতা দিয়ে রি-আপলোড বা রি-পোস্ট করে ভাইরাল করে দেয়া হচ্ছে সেটা আমাদের জন্য বেশ উৎসাহমূলক ভূমিকা রাখছে। তিনটি পর্ব এ পর্যন্ত প্রায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ২০ লক্ষ্য ভিউস পেয়েছে ! আমরা ইচ্ছা করলে কপিরাইট স্ট্রাইক দিয়ে অনেকগুলো অবৈধ মাধ্যম থেকে ভিডিওগুলো নামিয়ে ফেলতে পারতাম, কিন্তু আমরা সে কাজটি করি নি এবং কখনোই করবো না। আমরা চাই আমাদের অনুষ্ঠান ‘হার্ড টক্’ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক দর্শকদের কাছে পৌঁছিয়ে যাক। তাই যারাই এটি রি-আপলোড করে প্রচার এবং প্রসারে ভূমিকা রাখছেন আমরা তাদের কপিরাইট স্ট্রাইক পাঠাচ্ছি না।
এবার একটি ব্যক্তিগত অনুভূতি শেয়ার করতে চাই। বাংলাদেশের একটি প্রথম সারির টিভি চ্যানেলের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি হিসেবে আমি মাস খানেক কাজ করেছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম সেখানে আমার পরিশ্রমের কোনো মূল্যায়ন করা হলো না, উপরন্তু একটি ভন্ড-প্রতারক ডাক্তার এর ব্যাপারে রিপোর্ট করার কারণে আমাকে ‘কারণ দর্শাতে’ বলা হলো, তখন নিজের আত্মসম্মানবোধ বজায় রেখে স্বেচ্ছায় চাকরিটি ছেড়ে দিয়ে কানাডা থেকে পরিচালিত অনলাইন প্লাটফর্ম ‘নাগরিক টিভি’ এর বার্তা প্রধান হিসেবে জয়েন করি। তখন অনেকেই আমাকে বলেছিলো মূলধারার একটি গণমাধ্যমের চাকরি এভাবে ছেড়ে দিয়ে আমি ভুল করেছি। কেউ কেউ বলেছিলো ওই ‘বহুল প্রচারিত’ টিভি চ্যানেলে লেগে থাকলে আমার অনেক পরিচিতি এবং নাম-ডাক বাড়তো!

আজ নাগরিক টিভিতে আমার বার্তা প্রধান হিসেবে তিন মাস হতে চললো। সবার দোয়া এবং ভালোবাসায় এই তিন মাসে যা কিছু অর্জন করেছি , সেই তথাকথিত ‘মূলধারার গণমাধ্যমে’ একজন রিপোর্টার হিসেবে লেগে থাকলে কতদূরই বা যেতে পারতাম ! ওরা কি কখনোই আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রিপোর্ট করতে দিতো ? ওরা কি কখনও আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে একটি টক্ শো উপস্থাপনার দায়িত্ব দিতো? এইসব মূলধারার গণমাধ্যম আসলে কতটা স্বাধীন সেটা আমরা সবাই অনুমান করতে পারি। এসব গণমাধ্যম যদি স্বাধীনভাবে পরিচালিত হতে পারতো তাহলে আমাদের নাগরিক টিভির মতো অনলাইন প্লাটফর্ম এর টক্ শো এর দিকে এত মানুষ ঝুঁকে পড়তো না এবং আমরা এত বেশি ভিউসও পেতাম না।
‘হার্ড টক্’ এর এই তিনটি পর্ব করতে গিয়েই আমি টের পেয়েছি উপস্থাপনা আসলে এত সহজ কোনো বিষয় না। ঠিকমতো সময় বন্টন করতে না পারলে সাথে সাথেই অতিথির কাছ থেকে যৌক্তিক প্রতিবাদ হজম করতে হয়। তাছাড়া উপস্থাপক হিসেবে কোনো একটি প্রশ্ন যদি কোনো একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে যায় ,তাহলে সেই দলের সমর্থকেরা সাথে সাথেই ‘দালাল’ বলে গালি দিতে থাকে। এসব বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই প্রতিনিয়ত নিজেকে সমৃদ্ধ করছি। দর্শকরাই ‘হার্ড টক্ উইথ নাজমুস সাকিব’ অনুষ্ঠানের প্রাণ। দর্শকদের প্রতিটি মতামতকে গুরুত্ব দেয় নাগরিক টিভি। আপনাদের প্রতিটি যৌক্তিক সমালোচনা আমাদের অনুষ্ঠানের মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আপনাদের ভালোবাসায় আপনাদেরই প্রিয় অনুষ্ঠান ‘হার্ড টক্’ পাড়ি দিতে চায় বহু দূর।
(নাজমুস সাকিব নাগরিক টিভির হেড অফ নিউজ হিসেবে কর্মরত আছেন। আপনাদের মতামত পাঠাতে ইমেইল করুন: [email protected])