করোনার রোগী সামলেই হিমসিম অবস্থা

নাগরিক প্রতিবেদক:
বাংলাদেশে মহামারী করোনা সংক্রমনের তীব্রতার কারণে ক্রমবর্ধমান রোগীর চাপ সামাল দিতে দিশেহারা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের তথ্য মতে দেশে গত বছর মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত ১৬৯ চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন। এ সময়ে নয় হাজার স্বাস্থ্যকর্মী সেবা দিতে গিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। এখন বিপুল সংখ্যক রোগী সামাল দিতে গিয়ে তারা তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন।

এ অবস্থায় হাসপাতালে করোনা রোগীগদের জন্য অধিক সংখ্যক শয্যা , আইসিইউ আর অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধির পাশাপাশি জরুরী ভিত্তিতে লোকবল বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে দু’হাজার চিকিৎসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা বাড়িয়ে করোনা রোগীর সেবা দেওয়া যাবে; কিন্তু জনগণ সচেতন না হলে গোটা দেশটাকে হাসপাতাল বানালেও পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যাবেনা। তাই জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই।

লকডাউন আর বাড়ানো হবে নাঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

এদিকে করোনা এমন ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতির মাঝে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আজ জানিয়েছেন, আগামী ৫ আগস্টের পর লকডাউন আর বাড়ানো হবে না। দেশে কোনো লকডাউন থাকবে না।

আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে লকডাউনের পক্ষে নই। কেবল লকডাউন দিয়েই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব না। এটা সংক্রমণ রোধের একটি উপাদান মাত্র।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করতে হলে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরিধান করলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে মানুষ ৭০ ভাগ নিরাপদ থাকবে। তাই জনসাধারণকে মাস্ক পরা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, সারাদেশে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হবে।

করোনায় মৃতদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেড়েছে

করোনায় আক্রান্ত হয়ে ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।

ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, বিভাগওয়ারি তথ্যে করোনায় ঢাকায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। তারপর চট্টগ্রাম বিভাগে, এরপর খুলনায়। সবচেয়ে কম সংখ্যক রোগী মারা গেছেন সিলেট বিভাগে।

জেলাভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছে, চার লাখ ১৯ হাজার ১২৮ জন। এরপরই বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অবস্থান। সেখানে ৭৪ হাজার ১৯৩ জন রোগী এবং সবচেয়ে কম রোগী ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শনাক্ত হয়েছে রাজশাহী জেলায়।

তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো এই মহামারি মোকাবিলার একমাত্র পথ নয়। সংক্রমণের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলার চ্যালেঞ্জ আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। মানুষের কাছ থেকে মানুষের যদি সংক্রমণ ছড়িয়ে না যায় তাহলে হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার ওপর চাপ কমে আসবে।

তিনি জানান, বিভিন্ন জেলায় বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধ আছে। এই উদ্যোগটিকে আবারও চালু করতে পারবো বলে আমরা আশা করি। আমাদের প্রশিক্ষিত মেডিকেল টেকনোলোজিস্টের স্বল্পতা আছে। সীমিত সংখ্যা নিয়েই আমরা চেষ্টা করছি সার্ভিসটি চালু রাখতে।

Sharing is caring!