
দেশে চলছে প্রাণঘাতী করোনার তৃতীয় ঢেউ। এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টও। পুরনো-নতুন ভ্যারিয়েন্ট মিলিয়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার এখন ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে আর এই ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের বেশিরভাগই গ্রামগঞ্জে নির্বিকারচিত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে সীমান্ত জেলাগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকরা।
করোনার ঊর্ধ্বমুখীর কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারা দেশে চলমান বিধি-নিষেধের মেয়াদ ১৫ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এদিকে করোনার টিকা ‘বঙ্গভ্যাক্স’ এবং ভারত বায়োটেক ও চীনের দুটি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এজন্য তিনটি কোম্পানিকেই কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ১৯ জুন থেকে ফের টিকাদান শুরুর আশা ব্যক্ত করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যারা টিকার জন্য আগে নিবন্ধন করেছেন, কিন্তু এখনও পাননি, তাদের ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিতে’ টিকা দেওয়া হবে। চীন থেকে পাওয়া ১১ লাখ ডোজ টিকার মধ্যে প্রথমে ৫ লাখ দেওয়া হবে। বাকি টিকা দ্বিতীয় ডোজের জন্য রেখে দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বুধবারের তথ্য বলছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। এ সময়ের মধ্যে ৩ হাজার ৯৫৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা গত ৫৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনার নতুন হটস্পট হচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো। এসব জেলা ভারতের পাশর্^বর্তী। ভারতজুড়ে তাণ্ডব চালানো করোনার ভ্যারিয়েন্ট এসব জেলায় সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়িয়েছে। তীব্র ছোঁয়াচে ও প্রাণঘাতী ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বলছে, করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ১৭ জন মারা গেছে রাজশাহী বিভাগে। খুলনায় ১৪ জন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৮ জন করে, সিলেটে ৬ জন, রংপুরে ৩ জন ও ময়মনসিংহে একজন মারা গেছে। বরিশালে কোনো মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব বলছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও নওগাঁয় সংক্রমণ-মৃত্যু বেশি। খুলনা বিভাগের সীমান্তবর্তী যশোর, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলায় সংক্রমণ বেশি। বাগেরহাটের মোংলায় প্রতিদিনই করোনাভাইরাস শনাক্তের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশে ওঠানামা করছে। রাজশাহী বিভাগে ৮১৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই রোগীদের মধ্যে রাজশাহীতে ৩৪৩, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৬, নওগাঁয় ১২৫, নাটোরে ১২০, পাবনায় ৩৫, জয়পুরহাটে ৬৬, সিরাজগঞ্জে ২৭ ও বগুড়ায় ৪১ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
খুলনা বিভাগে ৮১৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই রোগীদের মধ্যে বাগেরহাটে ৭৬, চুয়াডাঙ্গায় ১৬, যশোরে ২০৪, ঝিনাইদহে ৪৩, খুলনায় ২২২, কুষ্টিয়ায় ৯৮, মাগুরায় ২, মেহেরপুরে ৪১, নড়াইল ১৬ ও সাতক্ষীরায় ১০০ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রামে যারা আক্রান্ত হচ্ছে তাদের খুঁজে এনে হাসপাতালে ভর্তি করার ব্যবস্থা এবার নেই। কেউ নিজে থেকে হাসপাতালে এলে সেটা ভিন্ন কথা। যখন কেউ শারীরিকভাবে সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে, তখনই কেবল হাসপাতালে আসছে। আর এ কারণে রাজশাহী বিভাগে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এসএম আলমগীর বলেন, সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে সরকার বিশেষ নজর দিচ্ছে। সেসব এলাকায় সংক্রমণের কারণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্রমিতদের মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের রোগী বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে এর প্রকোপ বেশি দেখা গেছে। এবার রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে সংক্রমণ-মৃত্যু বেশি।