
দেশে মহামারি করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ
সরকার। চলতি মাসে আবারও দুই দফায় লকডাউন দিলেও হতদরিদ্র মানুষের জন্য কোন বরাদ্দ
নেই। এসব মানুষ জীবিবার খোঁজে রাস্তাঘাটে দেদারছে বের হচ্ছেন। এছাড়াও নানা অযুহাতে ঘর
থেকে বের হওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে সংক্রমণ বাড়ছেই। তবে কেন এই সংক্রমন ঠেকানে
যাচ্ছে না তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন ভোটারবিহীন সরকার উর্ধতন মহল।
দেশে এখন ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলছে। ইতোমধ্যে লকডাউনের ৭ দিন পার হয়েছে; কিন্তু
সংক্রমণ ও মৃত্যু কমেনি। বরং গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ ও মৃত্যুতে একের পর এক ভয়ঙ্কর
রেকর্ড হচ্ছে। বুধবার প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে প্রথমবারের মতো মৃত্যু ২০০ ছাড়িয়েছে। এদিন
আরও ২০১ জন মারা গেছে। নতুন করে ১১ হাজার ১৬২ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। এখন
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, চলমান কঠোর লকডাউনে এই সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব কি না?
দেশের ৬৪ জেলাই সংক্রমণের অতি উচ্চঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতি
ভয়ঙ্কর পর্যায়ে অবস্থান করছে ৫৭ জেলায়। আগে শুধু শহর এলাকায় রোগটির প্রাদুর্ভাব
থাকলেও এখন গ্রামে রোগী বেশি। শুরুতে লকডাউন কঠোরভাবে সবাই মেনে চললেও এখন তাতে
ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। শহরের অলিগলিতে মানুষ আড্ডা দিচ্ছে আর গ্রামেও একই অবস্থা।
স্বাস্থ্যবিধি অনেকেই মানছে না। মাস্ক পরায় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক অনীহা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় (ডেল্টা) ভ্যারিয়েন্টের সামাজিক বিস্তার ঘটায় করোনা
দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, রোগীরা শেষ
সময়ে আসছে। রোগীদের অনেকেই অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে ৪০ থেকে ৫০-এ নেমে গেলে
হাসপাতালে আসছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে ব্রেইন ড্যামেজ আগেই হয়ে যায়। এ ধরনের
রোগীকে বাঁচানো খুব কঠিন হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম বলেছেন,
এখন যে সংক্রমণ হচ্ছে তা কমিউনিটিতে ছড়িয়ে গেছে। সংক্রমণ গ্রামের লোকজনের মধ্যে বেশি
হচ্ছে। গ্রামের রোগীরা অসতর্ক উল্লেখ করে অধ্যাপক খুরশিদ আলম বলেন, গ্রামের বয়স্ক
মানুষ হাসপাতালে আসেন অনেক পরে, এ কারণে মৃত্যুর হার বেশি হচ্ছে।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক
হোসেন বলেন, এটা নিঃসন্দেহ যে গ্রামে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। কারণ গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে
পড়ছে। ভারতের সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম থেকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামে
চলাচলের কারণে সংক্রমণ হয়েছে। তিনি বলেন, এখন যা পরিস্থিতি তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ
করতে পারে ঈদের সময়। গরুর হাট ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ঈদের পর গ্রাম থেকে
শহরে আরও করোনা আসবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, জেলার মোট রোগীর ৮০
শতাংশই ছিল শহরে। বাকি ২০ শতাংশ অন্য উপজেলা বা অন্যান্য গ্রামের। এখন পৌরসভা, প্রতিটি
ইউনিয়ন ও উপজেলার রোগী আছে। এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গোটা জেলায় রোগী হচ্ছে। এখন নির্দিষ্ট
কোনো জায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। প্রতিটি গ্রামে রোগী। এখন রোগীর অনুপাত সব জায়গায় একই।