কিউবা উত্তাল: সরকার বিরোধী বিক্ষোভ !!

নাগরিক প্রতিবেদক
কিউবায় কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বার্তা
সংস্থা জানিয়েছে, রোববার কমিউনিস্ট শাসিত দ্বীপরাষ্ট্রটিতে হাজার হাজার মানুষ রাজধানী হাভানা ও
সান্তিয়াগোসহ বেশ কয়েকটি শহরে ‘স্বাধীনতা’র দাবিতে স্লোগান দেয় ও প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ কানেলের
পদত্যাগ দাবি করে। বিক্ষোভকে যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়েছে কিউবার সরকার।
সাবেক মিত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই পশ্চিমা পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে কিউবার লড়াই করতে হচ্ছে
শক্তিশালী কোনো মিত্র ছাড়াই। এবার সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে তারা। এর মধ্যেই করোনাভাইরাস
সংক্রমণের রেকর্ড বৃদ্ধি ঘটেছে। নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের সঙ্কট, নাগরিক স্বাধীনতার সঙ্কোচন এবং
মহামারি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট ও ক্ষুব্ধ মানুষ প্রতিবাদে নেমেছে। তারা স্বাধীনতা,
গণতন্ত্র ও করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় টিকার দাবি জানিয়ে স্লোগান দেয়। হাভানার কেন্দ্রস্থলে ও
সমুদ্র তীরবর্তী সড়কে কয়েক হাজার লোক জড়ো হয়ে ‘দিয়াজ কানেল সরে যাও’ বলে স্লোগান দেয়। সে সময়
সরকারের সমর্থকরাও কিউবার পতাকা হাতে রাস্তায় নেমে আসে আর ‘ফিদেল’, ‘ফিদেল’ বলে স্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকালে রাজধানী হাভানাজুড়ে পেছনে মেশিনগান বসানো স্পেশাল ফোর্সের জিপগুলোকে টহল দিতে দেখা
যায়। প্রতিবাদকারীরা বাসায় চলে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত নগরীটিতে বিপুল পরিমাণ পুলিশের উপস্থিতি
দেখা গেছে ।


হাভানার ভেতর দিয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়া প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দেওয়া ৫৩ বছর বয়সি
নাচের শিক্ষক মিরানডা লাজারা বলেন, ‘সত্যিই আমরা অনেক কঠিন সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আমাদের
বাস্তবতার একটি পরিবর্তন দরকার।’ রোববার বিকালে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বক্তব্যে কিউবার
প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান দিয়াজ কানেল এই অস্থিরতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র কয়েক দশক ধরে কিউবার বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করে রেখেছে আর সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে তা আরও কঠোর করেছে।দিয়াজ কানেল বলেছেন, প্রতিবাদকারীদের মধ্যে অনেকেই আন্তরিক ছিলেন কিন্তু তারা যুক্তরাষ্ট্রেরপরিচালিত সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণায় এবং মাঠে থাকা ‘ভাড়াটে ব্যক্তিদের’ দ্বারা বিভ্রান্ত হয়েছেন। এরপর
আর ‘উসকানি’ দেওয়া হলে তা সহ্য করা হবে না বলে সতর্ক করে সমর্থকদের এসব ‘উসকানিদাতাদের’
প্রতিরোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পশ্চিম গোলার্ধসম্পর্কিত ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি চাং বলেছেন, ‘কিউবায় লড়াইয়ের ডাক গভীর উদ্বেগজনক। কিউবান জনগণের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার অধিকারের পক্ষে আছি আমরা।’
হাভানার প্রতিবাদস্থলে সম্ভাব্য সাদা পোশাকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় নিরাপত্তা বাহিনীগুলোকে দুই
ডজনের মতো প্রতিবাদকারীকে গ্রেফতার করতে দেখেছেন আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক।
পুলিশ প্রতিবাদকারীদের দিকে পেপার স্প্রে ছিটানোর পাশাপাশি তাদের আঘাতও করেছে। সে সময়
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একজন ফটো সাংবাদিককেও আঘাত করে পুলিশ।
হাভানার এক এলাকায় পুলিশের একটি খালি গাড়ি উল্টে ফেলে সেটির দিকে পাথর নিক্ষেপ করে ক্ষুব্ধ
প্রতিবাদকারীরা। অন্য জায়গায় দাঙ্গা পুলিশকে দেখে ‘দমনকারী’, ‘দমনকারী’ বলে স্লোগান দেয় তারা। কী হচ্ছে
তা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখার পর তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন বলে কিছু প্রতিবাদকারী
জানিয়েছেন। আড়াই বছর আগে কিউবায় মোবাইল ইন্টারনেট চালু হওয়ার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমগুলো সেখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Sharing is caring!