
দেশে হুহু করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। বাড়ছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও। সামনে আসছে রমজান। প্রতিবছর রমজানে দাম বৃদ্ধি রোধে সরকার নানা উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। উল্টো ভোগান্তি বাড়ে মানুষের। দাম বাড়াতেই থাকে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। মাঝখানে গ্যাড়াকলে পড়ে পিষ্ট হন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ।
এবারও ব্যতিক্রম নয়। রজমানে দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এবার তারা ছয়টি পণ্যের দাম ও সরবরাহ ঠিক রাখতে কাজ করছে। এই ছয়টি পণ্য হলো, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুর। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাদের এই উদ্যোগ ও প্রস্তুতি বাস্তবে রুপ নেবে তো?
রমজানকে সামনে রেখে এবারই প্রথমবাবের মতো দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে ‘ট্রাকসেল’ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে টিসিবি। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে পবিত্র রোজা শুরু হতে পারে। তবে ক্রেতাদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে ১ এপ্রিল থেকে টিসিবি বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে।
আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে দেশে প্রায় ১০-১২ হাজার কোটি টাকার ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এবার আগেভাগে আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে দ্বিগুণ পণ্যসামগ্রী দেশে এসেছে। তবে পণ্য নিয়ে যেন কোনো ধরনের কারসাজি করতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে নজরদারী করছেন। কিন্তু শুধুমাত্র রমজানে কেন এই নজরদারী। বাকী মাসগুলোতে তারা কি করেন এই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের। নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম ঠিক রাখতে এবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশও দিয়েছে মন্ত্রনালয়কে। ভোগ্যপণ্যের জায়ান্ট গ্রুপ হিসেবে খ্যাত এস আলম গ্রুপ, নূরজাহান গ্রুপ, মোস্তফা গ্রুপ, বিএসএম গ্রুপ, এমইবি গ্রুপ, পিএইচপি ফ্যামিলি ও আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ ও মেঘনা গ্রুপ রোজা সামনে রেখে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছে।
জানা গেছে, রমজান সামনে রেখে এবার তিন মাস আগে থেকে আমদানির প্রস্তুতি নিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে আমদানি করা পণ্যের বড় অংশ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস হয়ে পৌঁছে গেছে দেশের বড় বড় পাইকারি বাজারগুলোয়। আমদানি করা পণ্যে ঠাসা এখন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এবং ঢাকার মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, বাদামতলী, মোহাম্মদপুর ও শ্যামপুর কৃষিপণ্যের মার্কেট।
সূত্র জানিয়েছে, রোজায় চাহিদা বাড়ে এমন ছয় পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং ন্যায্যমূল্যে বিক্রির বিশেষ উদ্যোগ রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে সারা বছর ভোজ্যতেলের চাহিদা ২১ লাখ টন, যার ৯০ শতাংশই আমদানি করতে হয়। কেবল রোজার মাসে ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকে ৪ লাখ টনের মতো। সারা বছরের জন্য প্রয়োজন হয় ১৮ লাখ টন চিনি, এর মধ্যে ৩ লাখ টনের চাহিদা থাকে কেবল রোজায়। সারা বছর যেখানে ৫ লাখ টন মসুর ডাল লাগে, সেখানে রোজায় চাহিদা থাকে ৮০ হাজার টনের মতো। ডালের চাহিদা মেটাতে ৫০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বছরে ৮০ হাজার টন ছোলার প্রয়োজন হয় দেশে, যার ৮০ শতাংশই ব্যবহার হয় রোজার মাসে। এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় পেঁয়াজের। ২৫ লাখ টন বার্ষিক চাহিদার ৫ লাখ টনই ব্যয় হয় রোজার সময়।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, দ্বিগুণ খাদ্য আমদানির জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে টিসিবি বিশাল পরিমাণ খাদ্যপণ্য আমদানির চিন্তা করছে, যেন কোনো অবস্থাতেই সাধারণ মানুষের কষ্ট না হয়।