প্রতি বছর আগুনে পুড়ে মারা যায় ২৩৩ জন

নাগরিক প্রতিবেদক
তাজরীন, নিমতলী, চকবাজার, বনানীর অগ্নিকাণ্ড ও সবশেষ রূপগঞ্জ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় স্তব্ধ হয়ে যায় দেশবাসী। এসব ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসছে সবাই। গ্রেফতার হয় অনেকে, কর্তৃপক্ষ পরিত্রাণের উপায় খোঁজে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও ভবনে অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে অনেকাংশে কমানো যায় আগুনে হতাহতের সংখ্যা। যদিও দেশের অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনে নেই এই জীবন রক্ষাকারী বন্দোবস্ত। এ ব্যাপারে ফায়ার সেফটি ইঞ্জিনিয়ার এমএ রশিদ টিপু সময়ের আলোকে বলেন, ‘অসচেতনতা ও ভবন নির্মাণের সময় কিছু টাকা বাঁচানোর কারণে আগুনে হতাহতের ঘটনা বেশি হচ্ছে। সামান্য টাকা বাঁচাতে গিয়ে যাচ্ছে অমূল্য প্রাণ।’ তিনি বলেন, ‘ভবনের অগ্নি সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায় এক. সক্রিয় ব্যবস্থা, দুই. অসক্রিয় ব্যবস্থা। সক্রিয় পদ্ধতিতে তাপ ও ধোঁয়া শনাক্তকরণ ব্যবস্থা থাকতে হয়। এসব যন্ত্রের সাহায্যে অগ্নিকাণ্ডের শুরুতেই তা শনাক্ত করে সতর্ক সঙ্কেত (অ্যালার্ম) দেওয়া, যেন ভবন ব্যবহারকারীরা দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারে। সক্রিয় ব্যবস্থার মধ্যে আরও থাকতে পারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার, স্প্রিঙ্কলার, হোসপাইপ সিস্টেম ইত্যাদি।

এগুলোর সাহায্যে আগুন নেভানো হয়। আর স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম হলো স্বয়ংক্রিয়, যা আপনা আপনি চালু হয়ে আগুন নির্বাপণ বা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। অস্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা হলো ভবনের এমন কিছু নির্মাণ বৈশিষ্ট্য, যা আগুনের বিস্তার রোধ করবে এবং ধোঁয়ার প্রভাবমুক্ত অবস্থায় বাসিন্দাদের নিরাপদ নির্গমন নিশ্চিত করবে। কারণ সারা পৃথিবীতেই অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশের মৃত্যু হয় ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে।’

ইঞ্জিনিয়ার টিপু বলেন, ‘সঠিক ডিজাইনের নির্গমন পথ আগুন বা অন্য দুর্যোগ থেকে মুক্তির নিরাপদ রাস্তা তৈরি করে। আগুন, ধোঁয়া বা উত্তাপে বিপদগ্রস্ত হওয়ার আগেই সব বাসিন্দাকে সবচেয়ে কম সময়ে নিরাপদ স্থানে পৌঁছাতে সঠিক প্রস্থানের ব্যবস্থা করা উচিত।’

ইলেকট্রনিকস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর আগুনে পুড়ে গড়ে ২৩৩ জন মানুষের মৃত্যু হয়। আহত হচ্ছে গড়ে প্রায় ৫ হাজার। এ ছাড়া আগুনে প্রতিবছর গড়ে ৪ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার সম্পদ ভস্মীভূত হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৬ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। গত ৮ বছরে সারা দেশে ১ লাখ ৩০ হাজার ২১৫টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছে প্রায় ১১ হাজার জন।

Sharing is caring!