
নকীব মাহমুদ, ঢাকা:
বাংলাদেশে বর্তমানে কেউই ভোটারবিহীন সরকারের কোন সমালোচনা করতে পারে না। আর করলেই তাকে দমন ও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। তেমনই ঘটেছে হেফাজতের ক্ষেত্রেও। মাওলানা মামুনুল হক কাণ্ডে স্বৈরাচারি সরকার ঢালাওভাবে হেফাজতের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন ও মামলার খড়গ চালাচ্ছে। ফলে দলটিতে নেতৃত্ব এখন দিশেহারা। এ কারণে দলটি থেকে গোপনে ভোটারবিহীন সরকারের সঙ্গে সমঝোতার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সোমবার রাতে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতার সাথে গোপন বৈঠকে বসেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সেই বৈঠক খুব গোপনেই হচ্ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে সংবাদ পেয়ে যান সাংবাদিকরা। ফলে তড়িঘড়ি করেই বৈঠক শেষ করে কোনমতে পালিয়েছেন নেতারা। এমনকি সাংবাদিকরা তাদের রাস্তা আটকে জানতে চান, বৈঠকে কি আলোচনা হলো? কিন্তু তারা কোন কথাই বলেননি। মুখে কুলুপ দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করেন। সোমবার রাত ১০টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় শুরু হওয়া বৈঠকটি আনুমানিক রাত ১১টা পর্যন্ত চলে।
হেফাজত একটি অরাজনৈতিক দল। ফলে এই দলের বেশির ভাগই অপরিপক্ক নেতাকর্মী। নেই কোন পরিকল্পিত কর্মসূচিও। আর বেশির ভাগ নেতাই বৃদ্ধ। ফলে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে কি ধরনের কর্মসূচি ও করণীয় কি করা দরকার তা তারা বুঝে উঠতে পারছেন না। শেষ বয়সে মামলা ও জেলের ঘানি টানার চেয়ে ভোটারবিহীন সরকারের সাথে আলোচনায় বসাই উত্তম বলে মনে করছেন তারা। ফলে তাও করেছেন।
সূত্র জানয়িছে, সোমবারের গোপন বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন। একটু জেনে রাখা ভালো, এই গোয়েন্দা সদস্যরা এখন বাংলাদেশী রাম রাজত্ব তৈরি করেছে। তারা প্রতিটি বিষয়ে নাক গলান এবং তা নিয়ে কি হবে তা পরামর্শ দেন ভোটারবিহীন সরকারকে। আজও তারা তাই করেছে। গোপন সমঝোতার সময় তারা নানা দাবি দিয়েছে। তাদের দাবি হেফাজত মেনেও নিয়েছে। এখন সেই অনুযায়ী তারা মাঠে কাজ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই গোপন বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদী। হেফাজতের নেতারা চাইছেন, আর কোনও নেতাকর্মীকে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার না করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৈঠক শেষে, একেক করে হেফাজত নেতারা বেরিয়ে আসেন। এ সময় বৈঠকে কি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে হেফাজতে মহাসচিব নুরুল ইসলাম বলেন, আমি অসুস্থ, কোনো কথা বলতে পারব না।
রাত ১১টা ১৫ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন হেফাজতের নেতারা। এ সময় সংগঠনটির মহাসচিব নুরুল ইসলামকে দুইজন নেতা ধরে গাড়িতে তোলেন। এরপর কোনো কথা না বলে তারা দ্রুত চলে যান।
বৈঠকে হেফাজত নেতারা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশিদসহ পুলিশের দুই-তিনজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। হেফাজতে ইসলামের মহা-সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম, হেফাজতের নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক, হেফাজত নেতা ও খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজীসহ ছয় থেকে সাতজন নেতা বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
মামুনুলের রিসোর্টকাণ্ডের পর গত এক সপ্তাহ ধরে একের পর এক গ্রেফতার হচ্ছেন হেফাজত নেতারা। সবশেষ গ্রেফতার করা হয় আলোচনার কেন্দ্রে থাকা মামুনুল হককেও। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম জেহাদীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের একজন মধ্যম সারির নেতা বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব নূরুল ইসলাম জেহাদীর নেতৃত্বে তিন জন সহকারী মহাসচিব ও একজন নায়েবে আমির ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তারা হেফাজতের নির্দোষ ব্যক্তিদের মুক্তি, বয়স্কদের হয়রানি না করা, পুলিশের গুলিতে নিহতদের ক্ষতিপূরণ, কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়াসহ কয়েকটি দাবি জানান।
হেফাজতের ওই নেতা বলেন, সরকার হেফাজতকে বিরোধী দল মনে করে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। যেভাবে হেফাজতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হতে পারে। এছাড়া হেফাজতের অরাজনৈতিক আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গিয়ে পরিস্থিতি খারাপ করার চেষ্টা করছে। সরকারকে আমরা এই বার্তাটিই দিতে চেয়েছি।’
যোগাযোগ করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তাদের সমঝোতার প্রস্তাবের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমাদের কাছে কেউ এ ধরনের প্রস্তাব নিয়েও আসেনি। আইন ভঙ্গকারীদের সঙ্গে সমঝোতার কোনও প্রশ্নই আসে না।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে তারা হেফাজতের ৩০ জন সক্রিয় নেতার একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এরমধ্যে কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে।