চীনের টাকায় নজর বাংলাদেশের, মন খারাপ ভারতের

জার্মানির মিউনিখে বসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমনভাবে বক্তব্য দিয়েছেন , যেন বাংলাদেশ আবার ‘তলাবিহীন ঝুড়িতে’ পরিণত হয়েছে। চারিদিকে অভাব আর অভাব। যদিও তার সরকারই সারাক্ষণ লোক দেখানো উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির মিথ্যা গল্প শোনায় জনগণকে।

যদিও এসব কথার মধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছে, চীনের টাকায় তারা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চায়। এতে করে ভারতের ‘মন খারাপ’ হয়ে গেছে। কারণ আঞ্চালিক রাজনীতিতে ভারতের পাশে এতদিন কেবল বাংলাদেশই ছিল, এখন মোমেনের বক্তব্যে ভারত অনেকটাই বাংলাদেশের বন্ধুত্ব হারানোর শঙ্কায় রয়েছে।

তবে জার্মানির মিউনিখে ওই বাঁকা কথার পর ফ্রান্সে আবার দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৈঠক করেছেন৷ আর সর্বশেষ খবর হলো, সেই বৈঠকেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ জুনের মধ্যে ভারত সফর করবেন আব্দুল মোমেন৷

এদিকে বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন দুই দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন৷ তার এই সফরের উদ্দেশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে আলোচনা৷ তিনি ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাথে বৈঠক করবেন৷ বাংলাদেশ-ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনে শেখ হাসিনার চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে দিল্লি সফরের কথা রয়েছে৷ গত বছরের মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশে আসেন৷ তখন তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান৷

জার্মানির মিউনিখে গত শনিবার মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে আলোচনা চলাকালে চীন যেভাবে আর্থিক সহায়তা দেয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটগুলো তেমনটা দিতে পারবে কিনা- বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের এমন প্রশ্নের জবাব ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বেশ কড়াভাবেই দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয় এমন অবকাঠামো প্রকল্প নির্মাণে ঋণ নেয়ার আগে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে ভাবতে হবে৷ এ নিয়ে উদ্বেগ না থাকলে ভঙ্গুর অবকাঠামোই তৈরি হবে৷’’

তিনি শ্রীলঙ্কায় চীনের কিছু বিনিয়োগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, সেখানে চীনা অর্থায়নে প্রকল্পগুলো তারা চালাতে না পেরে চীনকেই আবার ভাড়া দিয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এই অঞ্চলের অনেক দেশের ওপর আমরা এখন দেনার বোঝা চাপিয়ে দিতে দেখছি৷ যে এয়ারপোর্টে একটি বিমানও অবতরণ করবে না, বা যে বন্দরে একটি জাহাজও আসবে না- বাণিজ্যিকভাবেও টেকসই নয় এমন সব প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে৷’’

তবে মোমেন বলেন, ‘‘বাংলাদেশে উন্নয়ন চলছে, এই বাস্তবতায় কী করা উচিত সে সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন৷ জনগণও আরো অবকাঠামো চায়৷’’

তবে এরপর প্যারিসে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় গিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়৷ সোমবার সন্ধ্যার সেই বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এক টুইট বার্তায় বলেন, ‘‘২০২২ সালে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছবে বলে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷’’

এদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তি নিষ্পন্ন করার বিষয়ে পুনরায় জোর দিয়ে আব্দুল মোমেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন৷ এছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি বন্টন নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত হয়৷

Sharing is caring!