ইসলামী বক্তা ত্ব‘হাকে গুম করলো কারা ?

ইসলামী বক্তা ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান। গত ৪ দিন ধরে তিনি নিখোঁজ বলে দাবি পরিবারের

উদীয়মান ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান। ৪ দিন আগে নিখোঁজ হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রংপুর থেকে সাভার আসার পথে চারজন সঙ্গীসহ নিখোঁজ জন ত্ব‘হা। কিন্তু এখনো তারসহ বাকীদের খোঁজ মেলেনি। তবে তাকে খুঁজে বের করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও কোন প্রকার সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ তার পরিবারের। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এই বক্তা বাস্তবতা, ইসলাম ও সরকারের কড়া সমালোচনার কারণেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে তুলে নিয়েছে। এছাড়াও উদিয়মান এই বক্তাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তুলে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। অথচ দেশের চলচ্চিত্র জগতের অভিনেত্রী পরীমণি তার ফেসবুক স্টাটাস দেওয়ার পরই তার মামলার আসামী ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অন্যদিকে ইসলামী বক্তা ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করার কোন লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ত্ব‘হাকে তুলে নিয়ে কোন প্রকার কথা না বলায় সরকারের প্রতি তাকে দ্রুত ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংগঠন। তারা সোমবার এ দাবি করেছে। তবে সরকার এখনো সেই বিষয়ে কিছুই জানায়নি মানবাধিকার ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা এই সংগঠনটিকে।

ত্ব‘হাকে উদ্ধারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ ধরনের ‘নিখোঁজ’ হওয়ার সংবাদ কেন উদ্বেগ ও শঙ্কার জন্ম দেয়, তা সবিস্তারে বলা দরকার নেই। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে এ ধরনের ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তিরা আসলে যার শিকার হন, তাকে গুম ভিন্ন আর কিছু বলার সুযোগ নেই।

যদিও সরকারের পক্ষ থেকে সব সময় এ দাবি করা হয়ে থাকে যে বাংলাদেশে কোনো ধরনের গুমের ঘটনাই ঘটে না, কিন্তু দেশের এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জোর দিয়ে বলে আসছে, বাংলাদেশে গুমের ঘটনা অব্যাহত। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের হিসাবে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ১১ জন গুম হয়েছেন। গত বছরের আগস্ট মাসে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য ছিল, গত ১৩ বছরে বাংলাদেশে ৬০৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৭৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। ৮৯ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৫৭ জন কোনো না কোনোভাবে ফিরে এসেছেন। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন (এএইচআরসি) বাংলাদেশে ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গুম হওয়া ৫৩২ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছিল ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে। কে কীভাবে গুম হয়েছিলেন, তারও বিস্তারিত সেখানে আছে। এ সংখ্যা যে বেড়েছে, তা আমরা তো দেখতে পাচ্ছি।

এর আগেও দেশে এরকম অনেক আলেম ও বুদ্ধিজীবীকে তুলে নিয়ে আবারও ফেরত দেওয়ার ঘটনা রয়েছে। তবে এসব দেশের সরকারী নতজানু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা করে থাকে। তাদের পাশাপাশি সরব ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা `র‘
এর সদস্যরা । তারা এখন হাসিনার অনুমত বাহিনীর মতোই কাজ করছে। এই ভারতীয় গোয়েন্দা সদস্যদের প্রধান কাজই হলো-কারা ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছে, ওয়াজ করছে, ইসলামী বক্তা হয়ে উঠছে, কারা দেশের পক্ষে কথা বলছে এসব মানুষকে টার্গেট করে তারা। এরপর কোন এক সময় সুযোগ বুঝে তুলে নিয়ে গুম করে ফেল। তেমনই পরিণতি হয়েছে এই্ ইসলামী বক্তার। এমনটাই ধারণা করছেন দেশের সচেতল মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোটারবিহীন সরকার তার ক্ষমতাকে দীর্ঘ করতে দেশে এখন মানুষের বাক স্বাধীণতাকে কেড়ে নিয়েছে। তারা কথায় কথায় এখন বিরোধী মতের মানুষের উপর চালাচ্ছে অত্যাচারের খড়গ। পান থেকে চুন খসলে দিচ্ছে ডিজিটাল আইনে মামলা। কাউকে ভোটারবিহীন সরকারের জন্য হুমকি মনে হলেই তাকে ধরে নিয়ে জঙ্গী বানানো হচ্ছে। দেশে এরকম ঘটনা দিনদিন বাড়ছে।

ইসলামী বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করতে সরকারের এত অনিহা কেন জানতে চাইলে দেশের কয়েকজন সচেতন নাগরিক বলেন, সরকারই ত্ব‘হাকে গুম করিয়েছে। কারণ সরকারের বিরোধী শক্তি হলো এখন ইসলামী বক্তারা। তাদের দমনে সরকার নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা কওমী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হাতে নিয়েছে। এবার তারা জনপ্রিয় ইসলামী বক্তাদের টার্গেট করছে। এর আগেও কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাদের নানা কারণে গুম করতে পারেনি। এবার ত্ব‘হাকে গুমের উদ্দেশ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখার বিষয়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো স্পষ্ট করে কিছুই বলা হয়নি। তার মানে হলো-তাকে সরকারি বাহিনী বা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা-র এর লোকেরাই তুলে নিয়েছে।

নিখোঁজ আদনানের মা আজেদা বেগম বলেন, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) রাত থেকে তার ছেলেসহ চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। এ নিয়ে ঢাকার দারুসসালাম এবং মিরপুর থানায় গেলে কোনো থানাই সাধারণ ডায়েরি বা মামলা গ্রহণ করেনি।

মা আজেদা আরও বলেন, ‌‌আদনান বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে রংপুর থেকে ঢাকার সাভারের উদ্দেশে রওয়ানা হন। পরবর্তীতে রাতে ছেলের ব্যবহৃত মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ফোন বন্ধ পাই। গন্তব্য স্থানসহ পরিচিত আত্মীয়স্বজন ও ছেলের নিকটতম বন্ধুদের বাড়িতে সন্ধান করেও এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ মেলেনি।

তিনি বলেন, আদনানের স্ত্রীর নাম হাবিবা নূর। সংসারে তাদের তিন বছরের একটি মেয়ে ও দেড় বছর বসয়ী ছেলে সন্তান রয়েছে। রংপুর নগরের সেন্ট্রাল রোডের আহলে হাদিস মসজিদ-সংলগ্ন গলিতে পৈত্রিক বাসা থাকলেও বিয়ের পর থেকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আদনান পার্শ্ববর্তী শালবন এলাকার চেয়ারম্যানের গলিতে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন।

এদিকে আদনানের স্ত্রী হাবিবা নূর জানান, আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান বৃহস্পতিবার রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন। রাত ২টা ৩৭ মিনিটে স্বামীর (আদনান) সঙ্গে তার শেষ কথা হয়। তখন আদনান গাবতলীর কাছাকাছি ছিলেন বলে জানিয়েছিল। এরপর রাত তিনটা থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

রংপুর মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, আদনানের পরিবার থেকে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আবু ত্ব-হার পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে দারুসসালাম জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, নিখোঁজের পরিবার কোনো অভিযোগ করেনি। আর অভিযোগ যদি না নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তারা থানায় এলে অভিযোগ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে দারুস সালাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তোফায়েল আহমেদ বলেন, শুক্রবার তার পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে এসেছিল থানায়। কিন্তু তারা কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।




Sharing is caring!