
নকীব মাহমুদ, ঢাকা:
দেশে এখন আর বিরোধী দল নেই। যা আছে তাও গৃহপালিত। সংসদে তারা দুটি কথা বললেই উঠে যায় হইচই। হট্টগোল। ফলে ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার যা ইচ্ছে তাই করছে। ইচ্ছে হলে বিরোধী মতের লোকজনকে ধরে জেলে পুঁড়ছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে আবার জনগনের টাকায় প্রকল্প বানিয়ে তাতে হরিলুটও করছে। তবে এই হরিলুটের অন্যতম প্রধান উইং হিসেবে কাজ করছে দেশের মানুষের কাছে আতঙ্ক ক্যাসিনো যুবলীগ ও টেন্ডারবাজ ছাত্রলীগ। দেশে এখন আর কোন বিরোধী মতের ঠিকাদাররা টেন্ডারপায় না। পুরো টেন্ডার এখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কব্জায়।
সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দিনে দুপুরে টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এখন অবধি কাউকে গ্রেফতার বা কারও বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি সিটির মেয়র। ফলে স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠেছে, এই টেন্ডার ছিনতাইকারীরা কি মেয়র ব্যারিস্টার তাপসের খুব কাছের মানুষ নাকি তার দলের লোক হওয়ায় তিনি চুপ আছেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এখন ঢাকার রাজপথের ময়লা ব্যবসা থেকে শুরু করে নিরাপত্তা কর্মী সরবরাহের কাজও চালাচ্ছে। আর এসব করছে দুই সিটির মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের ম্যানেজ করে। ঢাকায় এখন যতো টেন্ডার হয়তার সবটাই পায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। যারা এক সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী ও এলাকার ত্রাস ছিল। তারাই এখন বড় বড় ঠিকাদার পরিচয়ে বাগিয়ে নিচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজের টেন্ডার।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭ সাল থেকে ঢাকায় খেলাধুলার মাঠগুলো সংস্কার ও পার্কগুলোকে নতুনভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় জল সবুজে ঢাকা। এই জল সবুজের কাজগুলোর প্রত্যেকটি পেয়েছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা। ফলে তারা তাদের ইচ্ছেমত কাজ করছে। যখন ইচ্ছে কাজ শেষ করছে। ফলে দফায় দফায় বাড়ছে কাজের মেয়াদ ও বাজেট। এক কাজ শেষ করতেই লেগে যাচ্ছে ৫ বছর। এ নিয়ে দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন কোন কথাই বলেনি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রত্যেক কাজের জন্য সাবেক মেয়র খোকন পেতেন ২৫ শতাংশ টাকা। এই টাকাকে তিনি পারটেনটেন্স বলতেন। একারণে সিটিতে তিনি থাকাবস্থায় তাকে পারসেনটেন্স খোকন বলা হতো।

রামদা হাতে ছাত্রলীগের এক ক্যাডার। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও টেন্ডারবাজিতে ছাত্রলীগের এমন কাণ্ড ঘটাতে প্রায়সই দেখা যায়: ছবি-সংগৃহিত
শুধু তাই নয়, খোকন থাকাবস্থায় ঢাকার প্রতিটি মহল্লায় ময়লা তোলার কাজ দেওয়া হয় ছাত্রলীগের নেতাদের হাতে। ফলে সিটি নির্ধারিত ময়লার ফি ৩০ টাকা হলেও এখন প্রতি বাসা ও ফ্লাটে দিতে হয় ১০০-১৫০ টাকা। বছরে ঢাকার দুই সিটিতে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার একটি ময়লা বাণিজ্য হয়। যা এতদিন গোপন থাকলেও সম্প্রতি কিছু ঘটনায় প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু এই টাকার কোন অংশই সিটি কর্তৃপক্ষ পায় না বলে জানা গেছে।
গত মার্চ মাসে রাজধানীর দক্ষিণখান থানাধীন আশকোনায় ময়লার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা জাপানি হান্নান ও সোহেল রেজা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় জাপানি হান্নানের শটগানের গুলিতে আব্দুর রশিদ নিহত হন। খবর পেয়ে রশিদের পক্ষের লোকজন জাপানি হান্নানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় তারা একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এছাড়াও সর্বশেষ বুধবার রাজধানীর কলাবাগানের শুক্রবাদ এলাকায় এক বাসায় ময়লার বিল তুলতে গিয়ে এক বৃদ্ধার মাথা ফেটে দেন কলাবাগান থানার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা রুবেল। তবে এই ঘটনায় আহত বৃদ্ধার ছেলেকে নানাভাবে হুমকি দেওয়ায় তিনি আর মামলা করতে চায়নি। এখন সেই বিষয়টি স্থানীয় আওয়ামীলীগদের নিয়ে গঠিত সমাজ কল্যাণ সমিতির অফিসে তারা বিচার করবেন বলে জানা গেছে।
শুধু এই দুটো ঘটনাই নয়, দেশে প্রতিদিন কমবেশি বিভিন্ন জায়গায় টেন্ডার ও চাঁদাবাজি নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বাধছে।
আরও জানা গেছে, গত বছর যুবলীগের ঢাকা মহানগরীর নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাট ক্যাসিনো কাণ্ডে আটক হওয়ার কিছুদিন ভাটা পড়ে যুবলীগে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিতে। কিন্তু সেটি আবারও মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। ঢাকার গণপূর্ত ও সিটির বিভিন্ন টেন্ডারের কাজ পাচ্ছে যুবলীগের নেতারা। এই তালিকায় চিহিৃত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীরাও রয়েছে বলে জানা গেছে।