
নকীব মাহমুদ, ঢাকা:
স্ত্রী মেহজাবিন ও শ্যালিকা জান্নাতুল ফেরদৌস মোহেনীকে নিয়ে একই কক্ষে থাকতেন কদমতলীর ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় গ্রেফতার শফিকুল ইসলাম অরণ্য। নিহতদের স্বজন ও তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেহজাবিন-মোহেনী দুজনের সঙ্গেই যৌন সম্পর্ক ছিল তার। কেবল তাই নয়, শফিকুল যৌনকর্মের ছবি তুলে রাখত। তা দিয়ে জিম্মি করা হতো শ্যালিকাকে, বাধ্য করা হতো বারবার যৌন মিলনে। শফিকের শাশুড়ি মৌসুমী আক্তার বিষয়টি জানলেও ছিলেন নিরুপায়, লোকলজ্জার ভয়ে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারতেন না।
উল্লেখ্য, শনিবার জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯-এ একটি ফোন পেয়ে ঢাকার জুরাইনের মুরাদপুরে গিয়ে গৃহকর্তা মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪২) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মোহেনীর (২০) লাশ পায় কদমতলী থানা পুলিশ। মাসুদ রানার বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম নিজেই হত্যাকা- ঘটিয়ে ৯৯৯-এ ফোন করেন। লাশ উদ্ধারের সময়ই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
হত্যার শিকার মেহজাবিন-মোহেনীর বাবা মাসুদ রানার ভাই সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই তিনজনের হত্যাকা-ও মূলত শফিকুলের পরিকল্পনায় হয়েছে। কারণ সে আমার ভাইয়ের (নিহত মাসুদ রানা) কাছে টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত ছিল। ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মানতে পারছিল না মেহজাবিন। ফলে গত ৮ মাস আগে শফিকুলকে ডিভোর্স দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে এসেছিল। কিন্তু শফিকুল সেই চিঠি গ্রহণ করেনি। মেহজাবিন তার ভয়ে পালিয়ে বেড়াত।
নিহত মৌসুমীর বোন ইয়াসমিন বলেন, মোহেনী প্রায়ই বলত খালা আমি আর পারছি না। দুলাভাই তো আমাকে বারবার জিম্মি করে অবৈধ কাজ করতে বাধ্য করছে। তখন আমি তাকে পরামর্শ দিতাম তোমরা পুলিশের কাছে যাও। কিন্তু সে বলত পুর্লিশের কাছে গেলে তো দুলাভাই সব কিছু ফেসবুকে প্রকাশ করে দেবে। মোহেনীকে অপহরণ মামলায় তার মায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতেও বাধ্য করেছিল শফিক। এ ছাড়াও মেহজাবিনের বাবার কাছে টাকা চেয়ে না পাওয়ার কারণে ক্ষোভ ছিল অরণ্যের।
ফলে শ্বশুরসহ তিনজনকে মেরে ফেলেছে। তিনি আরও বলেন, এই তিনজনকে হত্যার পর মেহজাবিনকে দিয়ে অরণ্য ৯৯৯-এ কল করিয়েছে। অরণ্য এই হত্যাকা-ের মূল হোতা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কদমতলী থানার পরিদর্শক এসআই জাকির হোসেন বলেন, মেহজাবিন ছোট বোনের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে। এ ছাড়াও তার মায়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে আমরা তা যাচাই করছি। মেহজাবিনের চার দিন ও তার স্বামীর তিন দিনের রিমান্ড চলছে।
ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের ডিসি ইফতেখার আহমেদ বলেন, মেহজাবিন ছোট বোনের সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক নিয়ে বাবা-মাকে বিচার দিলেও কোনো কাজ হয়নি। বোনকে নিষেধ করলেও সে তার স্বামীর দিকে দিনদিন ঝুঁকছিল। এসব ক্ষোভ থেকে তাদের হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় মেহজাবিন। তবে সম্পত্তির কোনো বিষয় ছিল না। তারপরও আমরা বিষয়টি যাচাই করছি।