
সাবিত মোস্তফা:
সম্প্রতি সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টে হেফাজত নেতা মাওলানা মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনা সবার কম বেশি জানা। এ ঘটনার সময় থেকে এখন পর্যন্ত মাওলানা মামুনুল হক সরাসরি ও লাইভে এসে যেসব কথা বলেছেন ও দাবি করেছেন তার কাছে অনেক প্রশ্নের জবাব মেলেনি।
মামুনুল কবে বিয়ে করেছেন, কাবিননামা আছে কিনা, স্ত্রীর বাবার নাম তার কেন অজানা ছিল এবং তিনি কেন তার প্রথম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে বিয়ে এবং তিনি কেন ওই নারীকে নিয়ে রিসোর্টে গিয়েছিলেন এসব প্রশ্নের আজও তিনি কোন জবাব দিতে পারেননি। এমনকি বিষয়গুলো পরিস্কারও করতে পারেননি। তবে এই ঘটনার পর থেকে প্রকাশ্যে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন মামুনুল। এমনকি এই কয়েক দিন বাসাতেও ফেরেননি বলে জানিয়েছেন মামুনুল হকের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি।
তবে মামুনুল হক দাবি করেছেন, জান্নাত আরা ঝর্না নামে ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। হেফাজত ইসলামও বলছে একই কথা। তবে মামুনুল বা তার দল হেফাজত কেউই এর পক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ফলে মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়ে কবে কোথায় হয়েছিল সে উত্তর অজানাই রয়ে গেছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকেই মামুনুল হক কোথায় অবস্থান করছেন এ বিষয়ে পরিষ্কার কেউ কিছু জানাতে পারেননি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে মামুনুল হক মোহাম্মদপুরের বাসায় না গিয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় অবস্থান করছেন। ওই মাদ্রাসায় মামুনুল হক শিক্ষকতা করেন। মাদ্রাসা থেকে তিনি শুধু দলীয় বৈঠকে যোগদান করা ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। আগামীকাল (৮ এপ্রিল) মুন্সীগঞ্জের সিরাজাদিখানে হেফাজত নেতা মধুপুর পীরের কাছে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ শীর্ষ নেতাদের যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে মামুনুল হক যাবেন কিনা এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী আমেনা তৈয়বা সন্তানদের নিয়ে বাসা থেকে রাগ করে বের হয়ে গিয়েছিলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা তাকে আবার বুঝিয়ে বাসায় নিয়ে এসেছেন। মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীকে বর্তমানে মামুনুল হকের তত্বাবধানে বছিলার একটি ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও মামুনুল হকের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সবাই ভেঙে পড়েছেন। একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মামুনুল হকের মেজ ভাই মাওলানা মাহফুজুল হকের বক্তব্য জানা যায়নি।
ওই ব্যক্তি আরও জানান, মামনুল হকের সঙ্গে জান্নাত আরা ঝর্ণার সঙ্গে সত্যিই বিয়ে হয়েছিল কিনা সে বিষয়ে তারা এখনও অন্ধকারে। তারা শুনেছেন ২০১৯ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল। মামুনুল হক নিজে বিয়ের কথা বললেও দিন-তারিখ বা বিয়ের সাক্ষী কারা ছিল সে বিষয়ে কোনও কিছু বলছেন না। তাকে এ বিষয়ে চাপ দিয়ে কিছু বলাও যাচ্ছে না। প্রসঙ্গ উঠলেই তিনি ‘আল্লাহর কসম’ কাটছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিসোর্টকাণ্ডের পর থেকে মামুনুলকে ভেতরে ভেতরে নেতারা আর গ্রহণ করতে পারছে না। তারা তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেছে। শুধুমাত্র দলের মান বাঁচাতে তার পক্ষ নিয়েছে কিছু নেতা। তাও লোক দেখানো। এরই মধ্যে মামুনুলসহ ১৭ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কড়া মনোভাব দেখাচ্ছে।
পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। যারা ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। আমাদের একাধিক টিম এজাহারভুক্ত আসামিদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে।
এদিকে গত শনিবার ঘটনার রাতে মামুনুল হকের সঙ্গে মুফতি এনায়েত উল্লাহ নামে হেফাজতের এক নেতার একটি কথোপকথন ও এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে অজ্ঞাত এক হেফাজত নেতার আরেকটি কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রথম অডিওতে ঘটনার সময় মামুনুল হকের সঙ্গে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাও মুফতি এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা বলেন। এনায়েত উল্লাহ নিজেকে একটি অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী পরিচয় দিয়ে মামুনুল হকের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ের বিষয়ে আগে থেকেই জানতে বলে দাবি করেন। তবে অপর একটি অডিওতে মুফতি এনায়েত উল্লাহকে ভিন্ন কথা বলতে শোনা যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের একটু আগে থিকা হিন্টস দিয়া রাখলে ভালো হয়। মামুন ভাই হঠাৎ কইরা ভেতর থিকা আমারে ফোন দিছে। বলে, আপনি এইটা বলেন। এখন আমি কি কমু?’ কথোপকথনের অপরপ্রান্তে থাকা আরেক হেফাজত নেতা বলেন, ‘আমি তো সবাইরে বইলা রাখছি এইটা দুই বছর আগের ঘটনা।’ উত্তরে মুফতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এই কথাটা আমাদের বইলা রাখলে তো আমরা সবাই একই কথা কইতে পারি।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মুফতি এনায়েত উল্লাহ কাছে দাবি করেন, মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়ের সময় তিনি নিজে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এসময় কবে বিয়ে হয়েছে সেই তারিখ জানতে চাইলে দিন-তারিখ মনে নেই বলে এড়িয়ে যান। আনুমানিক সময়ের কথা জানতে চাইলে তিনি এটাকে ‘বিব্রতকর’ মন্তব্য করে ফোন কেটে দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মামুনুল হকের দ্বিতীয় বিয়ের দাবিটা পুরোটাই ভুয়া। সাক্ষী হিসেবে যাদের বলা হয়েছে তাদের কথাবার্তা শুনলেও বোঝা যায় মামুনুল হকের ‘সম্মান’ বাঁচানোর জন্য তারা মিথ্যে কথা বলছেন। জানা গেছে, প্রথম স্বামী শহীদুল ইসলামের সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার আগে থেকেই মামুনুল হকের সঙ্গে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। জান্নাত আরা ঝর্নার বড় ছেলে আব্দুর রহমানও এক ভিডিও বার্তায় এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।