সিলেট নগরীর বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে শনিবার পানি কিছুটা কমেছে। তবে জেলার কয়েকটি উপজেলায় পানি বাড়ছে, অন্যগুলোতে অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যার্ত লোকজনের দুর্ভোগ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। শ্রমজীবী লোকজন কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাদের ঘরে মজুত খাবার শেষ হয়ে গেছে। ত্রাণ সহায়তার আশায় তাদের দিন কাটছে।
এদিকে, শনিবার দুপুরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ ইমরান আহমদ মাত্র ১২০ প্যাকেট ত্রাণ নিয়ে যান জেলার মারাত্মক বন্যাকবলিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। কয়েক প্যাকেট ত্রাণ (শুকনো খাবার) বিতরণ করে মন্ত্রী চলে যান। পরে হাজারো বন্যার্ত মানুষের মধ্যে ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু। অবস্থা বেগতিক হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয়রা জানান, উপস্থিত লোকজনের তুলনায় ত্রাণের পরিমাণ খুবই কম হওয়ায় অনেকেই খালি হাতে ফিরেছেন।
ইছাকলস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুর রহমান ও পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াদ আলী জানান, মন্ত্রী উপজেলা সদরের থানা বাজার পয়েন্টে ত্রাণ বিতরণ করতে যান। মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে মাত্র ২০ জনকে সরকারি ত্রাণ দেওয়ার তালিকা করে উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে শত শত মানুষ ত্রাণ নিতে জড়ো হন। এ অবস্থায় মন্ত্রী অল্প কিছু লোকের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাওয়ার পর ত্রাণ নিয়ে তুমুল হট্টগোল ও কাড়াকাড়ি শুরু হয়। পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর খালি হাতে বাড়ি ফিরে যান শত শত মানুষ।
উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, মন্ত্রী মাত্র ১২০ প্যাকেট শুকনো খাবার নিয়ে থানা বাজার পয়েন্টে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেন। কিন্তু মন্ত্রী ত্রাণ দিচ্ছেন এমন খবরে শত শত মানুষ সেখানে জড়ো হন। পরে মন্ত্রী ৪-৫ জনকে ত্রাণ দিয়ে দ্রুত সেখান থেকে চলে যান। এরপর ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সিলেট নগরীর সুরমা নদীর পাড়ে অবস্থিত শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, কালিঘাট, শেখঘাট, কাজিরবাজার, কানিশাইল, বাগবাড়ি প্রভৃতি এলাকা এখনো বন্যাকবলিত। তবে শনিবার এসব এলাকায় পানি কিছুটা কমেছে। অভিজাত আবাসিক এলাকা শাহজালাল উপশহরের অনেক এলাকার সড়ক, বাসার নিচতলায় এখনো হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদে বরাক-সুরমা-কুশিয়ারা নদীর মোহনায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে এখনো প্রবল বেগে উজানের ঢল সুরমা ও কুশিয়ারায় নামছে। এতে ভাটিতে অবস্থিত উপজেলাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জকিগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩শ গ্রামের মধ্যে ২ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ২ লাখ মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন।
জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পল্লব হোম দাস জানান, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব ত্রাণ পর্যায়ক্রমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩৬ মেট্রিক টন চাল ও ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কুশিয়ারা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও বিশ্বনাথে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট উপজেলার কোথায়ও বন্যার পানি বেড়েছে, কোথায়ও রয়েছে অপরিবর্তিত।
পাউবোর কর্মকর্তা নিলয় পাশা শনিবার সন্ধ্যায় জানান, সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও বেড়েছে কুশিয়ারায়। তবে দুই নদীর পানিই এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।