এমপিকে ‘রাজাকারের ভাতিজা’ বললেন উপজেলা চেয়ারম্যান

কুমিল্লার বরুড়ায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুলকে ‘কুখ্যাত রাজাকারের ভাতিজা’ বলে মন্তব্য করেছেন বরুড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এএনএম মইনুল ইসলাম। এসময় ওই এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন।

শনিবার বরুড়া উপজেলা প্রশাসন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দিতে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিতে গিয়ে এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে রাজাকার পরিবারের সন্তানকে প্রধান অতিথি করায় মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে না।

চেয়ারম্যানের এমন বক্তব্যের দুই মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। তাতে বলতে শোনা যায়, ‘যার নেতৃত্বে রাজাকার, আলবদর, আল সামস গঠন করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন টুক্ক মিয়া। আর তার ভাই ছিলেন বরুড়ার আদ্রা ইউনিয়নের কুখ্যাত রাজাকার সামছুল আলম মিয়া। আর আজ যাকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হয়েছে, তিনি আর কেউ নন, ৭১ সালের সিএসপি অফিসার কুখ্যাত রাজাকার সামছুল আলমের ভাতিজা এমপি নজরুল। রাজাকার পরিবারের সন্তানকে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করায় আমি ক্ষোভ প্রকাশ করছি।’

উপজেলা চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আমার বাবা মরহুম আবদুল হাকিম ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক এবং সাবেক এমপি। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমি তা মানতে পারছি না। প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে না।

ভাইরাল হওয়া ওই বক্তব্য প্রসঙ্গে কুমিল্লা-৮ আসনের সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল রাত ৯টার দিকে বলেন, ‘আমার আপন কোনো চাচা নেই। একাত্তরে সিএসপি অফিসার ছিলেন আমার বাড়ির সামছুল আলম মিয়া। তাকে আমার সঙ্গে চাচা-ভাতিজা সম্পর্ক উল্লেখ করে অপপ্রচার চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পর আমি এর ব্যাখ্যা দিয়েছি, কিন্তু ওই অংশটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়নি।’

তবে উপজেলা চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, ‘সামসুল আলম একজন স্বীকৃত রাজাকার ছিলেন, ৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন। আমাদের স্থানীয় এমপি তার ভাতিজা। এ বিষয়ে যাবতীয় প্রমাণ সরকারি দপ্তরে সংরক্ষিত আছে। এমন প্রমাণ আমার কাছেও আছে। এ বিষয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই, এটা সর্বজন স্বীকৃত এবং আমি যা বলেছি, দায়িত্ব নিয়েই বলেছি।’

ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও- ভারপ্রাপ্ত) মীর রাশেদুজ্জামান। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বরুড়া পৌরসভার মেয়র বকতার হোসেন বখতিয়ার, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন লিংকনসহ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা ও তাদের পরিবার।

Sharing is caring!