মুনিফার মৃত্যু: ভিন্নখাতে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে

নকীব মাহমুদ, ঢাকা:
বাংলাদেশে এখন আলোচিত বিষয় কলেজ ছাত্রী মুসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যু। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি চক্র মেতে উঠেছে। তারা নানাভাবে মুনিয়ার পরিবারকে হয়রানি ও হেনস্তাও করছে। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে মুনিফার বোন একটি সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে কিছু নামধারী সাংবাদিক তাকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করে। এছাড়াও মুনিয়ার মৃত বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ পন্থী কিছু দালাল ও বসুন্ধ্যারা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের পক্ষ নিয়ে নানা প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। এমনকি যারা মুনিয়ার পক্ষ নিয়ে কথা বলছে তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি হিসেবেও তারা গালমন্দ করছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি গুলশানের একটি ফ্লাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায়, বসুন্ধ্যরার এমডি আনভীরের সঙ্গে তা প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মুনিয়াকে বিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে অন্তরঙ্গ ভাবে মেলামেশা করেছেন আনভীর। কিন্তু শেষে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আনভীর না করে এবং তাকে ফোনে নানাভাবে আজেবাজে কথা বলতে থাকে। পরে ওই ফ্লাট থেকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, এটি কি হত্যা নাকি আত্মহত্যা?

এর ঘটনার পর আত্মগোপনে চলে যায় বসুন্ধ্যরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। নিজেকে রক্ষার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করতে থাকেন। সর্বশেষ তিনি চার্টার্ড বিমানে পরিবার নিয়ে ঢাকা ছাড়েন। আবারও ফিরেছেন দেশে। বিষয়টি গোপন থাকেনি। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের সভাপতি নির্বাচিত হয়। তাকে ফুলের শুভেচ্ছা জানাতে যায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এর নির্বাচিত সদস্যরা। সেদিন থেকেই চাউর হয়ে যায় মুনিয়া হত্যার অন্যতম আসামী আনভীর দেশে ফিরেছেন। তবে এ ঘটনায় ক্র্যাব ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

আসামী হলেও গ্রেফতার হচ্ছে না বসুন্ধ্যরার এমডি:
মুনিয়ার মৃত্যুতে তার বোন বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় একমাত্র আসামী হলেন বসুন্ধ্যরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের ছেলে গ্রুপটির এমডি সায়েম সোবহান আনভীর। কিন্তু এক মাস হতে চললেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। এর আগেও তাকে কৌশলে দেশ ছাড়তে সহযোগিতা করে গুলশান পুলিশের দুর্নীতিবাজ ডিসি সুদীপ চক্রবর্তীসহ উর্ধতনরা। যদিও এখনো সে আদালত থেকে কোন প্রকার জামিন পায়নি বলে জানা গেছে। কিন্তু কেন তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না তাতে দেশবাসী বিস্মিত। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন- বাংলাদেশে আইন কি শুধু গরীবের জন্য নাকি সবার জন্য সমান ?

মুক্তিযোদ্ধাকে স্বাধীণতা বিরোধী বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে:
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বসুন্ধ্যরার এমডি মুনিয়ার মৃত্যুকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। বসুন্ধ্যরা গ্রুপ তাদের প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালেরকন্ঠ ও বাংলানিউজসহ নিউজ২৪ চ্যানেলে নানা অপ্রচার। শুধু তাই নয়, তাদের অন্যতম অনুসারী রুপান্তর রুপ ও আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের দুটি পত্রিকার মাধ্যমে সেই প্রপাগাণ্ডাও চলছে। মুনিয়াকে নিয়ে বিশেষ করে দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকায় নানা গালগল্প প্রকাশ করা হচ্ছে। আর এসব গল্প লিখে দিচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ক্রাইম রিপোর্টার সাইদুর রহমান রিমন নামে এক সাংবাদিক। এছাড়াও দেশ রুপান্তরের ক্রাইম রিপোর্টার আলাউদ্দিন আরিফ অন্যতম।

এই আরিফের নেতৃত্বেই ক্রাইম রিপোর্টাররা আনভীরেরর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল।

এসব ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আনভীর একটি গ্রুপকে নিয়ে নিজেকে রক্ষার জন্য মুনিয়ার মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে স্বাধীণতার বিরোধী শক্তি হিসেবেও প্রচার করছে। সবই করছে আনভীর কোটি কোটি টাকা ছিটিয়ে।

প্রশ্ন হলো-বসুন্ধ্যরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর যদি মুনিয়া হত্যায় জড়িতই না থাকেন তবে কেন তিনি এসব করছেন এবং কেন এত অপ্রচার চলছে? তবে আইনবিদরা বলছেন, দেশে সুশাসন থাকলে বসুন্ধ্যরার এমডি আনভীরকে গ্রেফতার করা হতো। আনভীরকে গ্রেফতার না করা মানেই হলো পুলিশ তার কাছে টাকা খেয়ে ম্যানেজ হয়ে গেছে।

Sharing is caring!