হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন মুসকান

ভারতের কর্ণাটকের এক কলেজে গেরুয়া কাপড় হাতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী একটি বড় দলের সামনে দাঁড়িয়ে বোরখা ও হিজাব পরা এক ছাত্রী ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দেন। তার এ অবস্থানকে সাহসী আখ্যা দিয়ে প্রসংশা করছেন অনেক। বাংলাদেশেও ফেসবুকে তিনি দিনভর আলোচনায় রয়েছেন।

এনডিটিভি জানায়, ওই ছাত্রীর নাম মুসকান। তিনি ওই কলেজের বিকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি বলে, ওই গেরুয়া কাপড়ধারীদের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে ‘চিন্তিত নন’ এবং তিনি হিজাব পরার অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাবেন। .

ভিডিওতে দেখা যায়, কর্নাটকের পিইএস কলেজে হিজাব পরা একটি মেয়ে মোটরসাইকেলে প্রবেশ করে। তাকে দেখে গেরুয়া কাপড় উঁচিয়ে স্লোগান দেয় একদল ছাত্র। তারা ‘জয় শ্রিরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের গালি দিতেও শোনা যায় বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। কলেজ প্রশাসন মেয়েটিকে ওই দল থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।

তবে মেয়েটি তাদের সামনেই মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে ‘আল্লাহু আকবর’ স্লোগান দিতে থাকেন।

এ বিষয়ে মুসকান এনডিটিভিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমি তাদের ভয় পাইনি। আমি যখন কলেজে প্রবেশ করি তখন তারা আমাকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেয় কারণ আমি বোরকা পরেছিলাম। তারা জয় শ্রি রাম চিৎকার করতে শুরু করে। তাই আমি আল্লাহু আকবর বলে চিৎকার করতে লাগলাম। অধ্যক্ষ ও প্রভাষকরা আমাকে রক্ষা করেছিলেন।

তিনি বলেন, ওই দলের ১০ শতাংশকে কলেজের বলে চিনতে পেরেছেন, বাকিরা বাইরের লোক বলে মনে হয়েছিল।

তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার আমাদের শিক্ষা। তারা আমাদের শিক্ষাকে নষ্ট করছে।

কর্ণাটক জুড়ে কলেজগুলি একদিকে হিজাব পরা ছাত্রদের এবং অন্যদিকে জাফরান স্কার্ফ পরা পুরুষদের দ্বারা ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ দেখা গেছে।

গত মাসে উদুপির সরকারি গার্লস পিইউ কলেজে বিক্ষোভ শুরু হয় যখন ছয়জন ছাত্রী অভিযোগ করেন যে তাদের হিজাব রাখার জন্য জোর দেওয়ার জন্য ক্লাসে বাধা দেওয়া হয়েছিল।

প্রতিবাদটি উডুপির আরও কলেজে ছড়িয়ে পড়ে এবং মান্ডা এবং শিবমোগার মতো অন্যান্য শহরে, কলেজের কর্মীরা হিজাব নিষিদ্ধ করে – যদিও নিয়ম এটির অনুমতি দেয় – এবং অনেক শিক্ষার্থী জাফরান স্কার্ফ পরে এবং স্লোগান দিয়ে সংঘর্ষের অবস্থান নেয়।

হিজাব পরা নিয়ে সংকটের শুরু গত সপ্তাহে জানিয়ে মুসকান বলেন, আমরা সব সময় বোরকা এবং হিজাব পরতাম। আমি ক্লাসে হিজাব পরতাম তবে তার আগে বোরকা খুলে রাখতাম। হিজাব আমাদের একটি অংশ। এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ কখনো কিছু বলেননি। বহিরাগতরাই ঝামেলা শুরু করে। তবে আমরা হিজাবের জন্য প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব। এটি একজন মুসলিম মেয়ে হওয়ার একটি অংশ মাত্র।

ওই ঘটনার পর তিনি নিরাপদ বোধ করছেন জানিয়ে বলেন, সকাল থেকে সবাই আমাদের বলছে আমরা আপনাদের সাথে আছি।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ভারতের কর্নাটকের বিভিন্ন স্কুলে হিজাব পরা মুসলিম ছাত্রীদের নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। যেখানে বেশ কয়েকটি স্কুল হিজাব পরা মেয়েদের ক্লাসরুম বা কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। মঙ্গলবার আদালতে শুনানির দিনে কর্নাটকজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ সোমবার কর্নাটকের একটি সরকারি কলেজে দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা মুসলিম নারী শিক্ষার্থীদের হিজাব পরার অধিকারের পক্ষে নীল হিজাব পরে বিক্ষোভ করে। একই দিনে চিক্কামাগালুরুর আইডিএসজি কলেজে শিক্ষার্থীদের নীল ওড়না এবং গেরুয়া ওড়না পরা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। হিজাবের বিরুদ্ধে যারা প্রতিবাদ করছে তারা গেরুয়া ওড়না পরে আসে।

সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর রাজ্যটির অন্তত দু’টি কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

হিজাব সংক্রান্ত মামলা গড়ায় কর্নাটকের হাইকোর্টে। সেখানে এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি চলছে। এর আগেই এ ইস্যুতে পারদ চড়ছে বিজেপি শাসিত ওই রাজ্যে।

তিন দিনের জন্য সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।

Sharing is caring!