নাগরিক প্রতিবেদক
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটির তদন্ত কাজ শেষে আয় বহির্ভুত অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য প্রমাণ পেয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার তদন্ত শেষ হওয়ায় গত সোমবার ১৩ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে জমা দেওয়া হয়।
দুদকের আইনজীবি মাহমুদুল হক জানান, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ অর্জন ও অন্যকে হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকা অর্জিত সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালত বন্ধ থাকায় অভিযোগ দাখিলের শুনানির তারিখ ধার্য হয়নি। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে অভিযোগপত্র গ্রহণের শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হবে। মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবি।
দুদক সূত্র জানায়, চুমকি কারণের ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার। বাকি ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার সম্পদ অবৈধভাবে অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
প্রদীপের স্ত্রী চুমকি চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি স্বর্ণ, একটি করে প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাস, কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট ও ব্যাংক হিসাবের মালিক। প্রদীপের ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী চুমকি কারণ এসব সম্পদ অর্জন করেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
চুমকি কারণ নিজেকে মাছ ব্যবসায়ী বলে দাবি করলেও তদন্তে তার মাছ ব্যবসার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এছাড়া তারা ৫৪ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫৭ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২০০৪ এর ২৬ (২), ২৭ (১) মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২), ৪ (৩) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ও দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধযোগ্য।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন। মামলায় ওসি প্রদীপের সঙ্গে তার স্ত্রী চুমকিকেও আসামি করা হয়।
সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছেন দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত চুমকি কারণ। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান মাামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. রিয়াজ উদ্দিন।