পদ্মাসেতুতে ধাক্কায় গ্রেফতার চালক

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটের রো রো ফেরি শাহজালাল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মাসেতুর ১৭ নম্বর পিলারে সঙ্গে ধাক্কা দেয়ার ঘটনায় ফেরি মাস্টারকে সাময়িক বহিস্কারের পাশাপাশি শনিবার ফেরির চালক আব্দুল রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে শুক্রবার সকাল পৌনে সোয়া ৯টার দিকে ইলেকট্রনিক সিস্টেম ফেল করায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিলারে ধাক্কা দেয় রো রো শাহজালাল নামের একটি ফেরি।

তবে চালক তার ভুল স্বীকার করেছেন। তার দাবি, স্রোত বেশি থাকায় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে বাংলাদেশের ভোটারবিহীন সরকার তা মানতে নারাজ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাদারীপুরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ফেরিটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে নিয়ন্ত্রণে এনে বড় ধরনের বিপর্যয় ছাড়াই শিমুলিয়া ঘাটে ফেরিটি নোঙর করা হয়।

মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়ার কাছে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা মেরেছে বিআইডব্লিউটিসির রো রো শাহজালাল ফেরি। এতে পিলারটির মূল কাঠামোর বেশ কিছু অংশ ভেঙে গেছে। তবে এ আঘাতকে সামান্য বলে মনে করছেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু যেভাবে তৈরি করা হয়েছে তাতে ৫ হাজার টন ওজনের ফেরির ধাক্কা সামলানোর মতো সক্ষমতা রয়েছে সেতুটির। এ ঘটনায় ফেরির চালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি। শুক্রবার সময়ের আলোকে তিনি এ তথ্য জানান।

রো রো ফেরি শাহ জালালের চালক আব্দুল রহমান বলেন, সকাল সোয়া ৯টার দিকে পদ্মা সেতুর ১৬ ও ১৭ নম্বর পিলারের মাঝখান দিয়ে আসার সময় হটাৎ করে ‘ফেরির ইলেকট্রনিক সিস্টেম ব্রেকার পরে যায়, তখন আমরা পরে যাওয়ার বিষয়টি জানিনা। দেখি ডানে-বামে কাজ করেনা। ফেরির পেছনে অনেক স্রোত, তারপর ইঞ্জিন স্টপ করে ফুল ব্রেক দিয়েছি। তারপরেও জাহাজ পেছন দিকে যায়নি , স্রোত ঠেলে নিয়ে যাওয়ায় পিলারের গায়ে ধাক্কা লাগে। তবে মুহূর্তেই ফেরিটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসায় যাত্রী ও গাড়ির কোন ক্ষতি হয়নি। পরে ফেরিটি নির্বিঘ্নেই ঘাটে এসে নোঙ্গর করে।

এবিষয়ে বিআইডাব্লিউটিসির শিমুলিয়াঘাটের সহকারী ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ জানান, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেরি শাহজালাল সেতুর পিলারে গিয়ে ধাক্কা লাগে। এ সময় ফেরিতে একটি মটর সাইকেল পরে যাওয়ায় বসে থাকা যাত্রী একটু ব্যাথা পায় তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।

পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার যে শাহজালাল ফেরি পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দিয়েছে সেটির ওজন ৫০০ টনের মতো হবে। এটি ছোট একটি ফেরি। এর ধাক্কায় পদ্মা সেতুর পিলারের যে ক্ষতি হয়েছে তা খুবই সামান্য। তবে আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে তার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে আমরা এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হবে। তারা যেন দক্ষ চালক দিয়ে এবং আরও সতর্ক হয়ে ফেরি চালায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।

তিনি বলেন, এটা কোনো ব্যাপার না। ধাক্কা লাগতে পারে এমন চিন্তা তো আমাদের ছিল, যেহেতু বড় নদীর মধ্যে বড় জাহাজ যাবে। সেই প্রভিশন আছে, ধাক্কা লাগতে পারে। কী মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে- জানতে চাইলে এই মেগা প্রকল্পের পরিচালক বলেন, ‘যেটুকু আঘাত লেগেছে, এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত না। তবে এসব ঘটনা যাতে রিপিট না হয়, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।’

এদিকে পদ্মা বহুমুখী সেতুর পিলারের সঙ্গে ফেরি এমভি শাহজালালের সংঘর্ষের বিষয়টি তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।

বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্যিক) এসএম আশিকুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে আরও আছেন বিআইডব্লিউটিএ’র পরিচালক মো. শাহজাহান, বিআইডব্লিটিসির এজিএম (মেরিন) আহমেদ আলী ও এজিএম (প্রকৌশল) রুবেলুজ্জামান। এই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

Sharing is caring!