রমজান সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার চরকিতে আরও হাওয়া লেগেছে। ধাপে ধাপে বাড়ছে একের পর এক জিনিসপত্রের দাম। বৃহস্পতিবার এই তালিকায় উঠে এসেছে চাল, ডাল, আলু, আদা ও রসুন। রাজধানীর মগবাজার, কারওয়ান বাজার, নাখালপাড়াসহ কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
পর্যাপ্ত উৎপাদনের পরও বাড়ছে আলুর দাম। তিন থেকে চার দিনের ব্যবধানে আলুর কেজিতে দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। চার দিন আগে বিক্রি হওয়া ১৫ টাকার সাদা আলুর দাম এখন ২০ থেকে ২২ টাকায় উঠেছে। আর লাল আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ টাকা, যা তিন থেকে চার দিন আগে পাওয়া যেত ১৮ থেকে ২০ টাকায়। অথচ কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে আলুর চাহিদা রয়েছে ৮০ থেকে ৯০ লাখ টন। ২০২১ সালে উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ছয় লাখ টন।
বছরজুড়েই চড়া ছিল চালের বাজার। কেজিতে তিন থেকে চার টাকা বেড়ে ১৫ থেকে ২০ দিন পর কমে দুই থেকে তিন টাকা। এভাবেই বেড়ে মিনিকেট চালের দাম দাঁড়িয়েছে ৬৫ থেকে ৬৮টাকা, আর নাজিরশাইলের দাম উঠেছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। স্বল্প আয়ের মানুষের মোটা চালের কেজিও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায়।
কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে চলছে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট। খোলা সয়াবিন ও পাম তেল পাওয়া যাচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি দোকানে। দামও রাখা হচ্ছে বেশি। প্রতি কেজি সয়াবিনের দাম ১৮০ এবং পাম তেলের কেজি ১৬৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। এক লিটারের বোতলের গায়ে ১৬৮ লেখা থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ১৭০ টাকা। আর পাঁচ লিটার বোতলের নির্ধারিত দাম ৭৯৫ টাকা হলেও কেউ কেউ দাম রাখছেন ৮০০ টাকা। বোতলে লেখা দামের চেয়ে বেশি দাম কেন জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের আল আমিন স্টোরের বিক্রয়কর্মী বলেন, কোম্পানিগুলো এখন বোতলে লেখা থাকে দামে তেল দিচ্ছে। এ কারণে দু-তিন টাকা বেশি নিচ্ছেন তারা।
আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা আটার কেজিতে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে ৩৬ থেকে ৪০ টাকা এবং প্যাকেটজাত ময়দা কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।
মাস খানেক আগে দু-তিন দিন হয়েছিল হালকা বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ছুতায় ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল পেঁয়াজের দাম। ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজের দাম বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝে কয়েকদিন কিছুটা কমে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় নেমে এসে আবারও দাম বেড়েছে মসলাজাতীয় পণ্যটির। আমদানি করা পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ২০ টাকা। ৫৫ টাকার দেশি রসুন ৬০ এবং ১২০ টাকার ভারতীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এ ছাড়া ২০ টাকা বেড়ে দেশি আদা ১০০ ও চায়না আদা ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বাজারে গিয়ে ক্রেতারা হচ্ছেন আরও হতাশ। এবার পুরো মৌসমেই সবজি বাজার ছিল চড়া। দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির কেজি ৪০ টাকার ওপরে। ফুলকপির পিস কিনতে ক্রেতার খরচ করতে হবে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এ ছাড়া চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক পিস লাউয়ের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। চড়া দামের জানান দিয়ে বাজারে ঢুকছে ঢ্যাঁড়স। সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। করোলা কিনতে গেলেও ক্রেতার খরচ হবে ১০০ টাকা।
এ ছাড়া পাঁচ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা এবং সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ডিমের ডজন কেনা যাবে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। গরুর মাংসের কেজি কিনতে খরচ হবে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।