
আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের খোঁজ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশের দাবি, তিনি আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে গাইবান্ধা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি তার প্রথম স্ত্রীর বাসায় ছিলেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।
তবে তার ফিরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্যালক জাকারিয়া হোসেন । তবে এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন, কীভাবে ফিরলেন সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জানা যায়নি।
আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান তার সঙ্গীদের নিয়ে এতদিন গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে আবু ত্ব-হার পূর্ব পরিচিত বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে গাইবান্ধা থেকে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। বিষয়টি আবু ত্ব-হার পরিবার থেকে পুলিশকে অবগত করা হয়। পরে জুমার নামাজের পর বেলা আড়াইটার দিকে রংপুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টারপাড়া এলাকায় আবু ত্ব-হা আদনানের প্রথম স্ত্রী আবিদা নুরের বাবার বাড়িতে যায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ। সেখান থেকে বেলা পৌনে ৩টার দিকে আবু ত্ব-হাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে থানা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তিনজনকে রাতেই আদালতে তোলা হয়।
এর আগে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানকে আটকের ১৫ মিনিট পর গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজকে তার নগরীর আশরতপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়। এর ঠিক কিছুক্ষণ পর আব্দুল মুকিতকে মিঠাপুকুরের জায়গীরহাট থেকে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এছাড়া মোহাম্মদ ফিরোজ আলম বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার সাফিয়ান পাড়ায় তার বাড়িতে ছিলেন। সেখানকার থানা পুলিশের মাধ্যমে তাকেও বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়।
আবু ত্ব-হা আত্মগোপনে ছিলেন পুলিশ এমন দাবি করলেও তার পরিবার এ নিয়ে এখনো কোন মুখ খোলেনি। এমনকি তারা মিডিয়ার সামনেও আসছেন না। বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি কেন এতদিন আত্মগোপনে থাকবেন আর একই সাথে এত ব্যক্তির সন্ধ্যা পুলিশই বা কি করে পেল এসব প্রশ্নের উত্তর মিলছে না।
পুলিশ যা বলছে:
নিখোঁজ আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান গাইবান্ধায় ছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে আব্দুল মুকিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজ ছিলেন। সেখানে অবস্থানকালে তারা সবাই নিজেদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ করে আবু ত্ব-হার কাছে রেখে দেন। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেই আবু ত্ব-হা তার সঙ্গীদের সঙ্গে আত্মগোপনে ছিলেন। এমনটাই দাবি করেছেন রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।
আবু মারুফ হোসেন বলেন, মূলত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে থাকতে চান বলে সঙ্গীদের জানান এবং তাদের সবাইকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলেন। ত্ব-হার কথায় রাজি হয়ে বাকিরাও স্বেচ্ছায় এভাবে আত্মগোপনে থাকেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকার দাবি করলেও এই ঘটনা রাষ্ট্র কিংবা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলানোর কোনো ষড়যন্ত্র কি-না তাও খতিয়ে দেখবে পুলিশ। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা করা এবং আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আদালতে তারা যে জবানবন্দি দেবেন, পরে সেই অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, ঘটনার দিন তারা ঢাকার গাবতলীতে পৌঁছালে ত্ব-হার ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে সেখান থেকে গাইবান্ধার ত্রিমোহনীতে চলে যান। সেখানে তার পূর্ব পরিচিত বন্ধু সিয়ামের বাড়িতে অবস্থান করেন। এ সময় ত্ব-হার সঙ্গে আব্দুল মুহিত, ফিরোজ আলম ও গাড়িচালক আমির উদ্দিনও ছিলেন। ওই বাড়িতে অবস্থানকালে ত্ব-হার ইচ্ছাতেই সবাই তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন। কিছুদিন এভাবে আত্নগোপনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। মূলত পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন সমস্যার কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে থাকতে চান বলে সঙ্গীদের জানান এবং মোবাইল ফোন বন্ধ রাখতে বলেন। তার কথায় রাজি হয়ে বাকিরাও স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন। তবে তারা স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থাকার দাবি করলেও এই ঘটনা রাষ্ট্র বা সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলার কোনো ষড়যন্ত্র কি-না তা খতিয়ে দেখবে পুলিশ।
আদালতে আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের আটকাদেশ চাওয়া হবে কি না এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না রংপুরের পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, আদালতে তাদের জবানবন্দি নেওয়া হতে পারে।

রংপুরে ওয়াজ মাহফিল শেষে ঢাকার বাসায় ফেরার পথে ১০ জুন আবু ত্ব-হা নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ ছিল তার পরিবারের। আবু ত্ব-হার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ঢাকার গাবতলী থেকে তারা নিখোঁজ হন। আবু ত্ব-হার সঙ্গে নিখোঁজ হয়েছিলেন আরও তিন জন। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে তার খোঁজ মিললো।
এদিকে খোকন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি রংপুর নগরীর মাস্টারপাড়ায় আবু ত্ব-হাকে দেখেন। কিন্তু ত্ব-হা সে সময় কোনো কথা বলেননি। মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন তিনি।
এদিকে আবু ত্ব-হা ও তার সঙ্গীদের পরিবারের কেউ এনিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের পরিবারে মা-বোন, স্ত্রী এবং গাড়িচালক আমির উদ্দিন ফয়েজের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মিডিয়ার পরিচয় জানতে পেরে আত্মগোপনে থাকার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।

ত্ব-হার আইনজীবি যা বললেন:
ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান ফিরে আসায় খুশি হয়েছেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার এম. সারোয়ার হোসেন। তবে নিখোঁজ হওয়ার পর ফিরে আসা অন্যদের মতো আবু ত্ব-হাও নীরব হয়ে যান কি না সে বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
শুক্রবার (১৮ জুন) ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন বলেন, আবু ত্ব-হার ফিরে আসার বিষয়টি তার স্ত্রী আমাকে নিশ্চিত করেছেন। চারটি জীবন ফিরে এসেছে। আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আবু ত্ব-হার ভাগ্য ভালো যে, অন্য নিখোঁজদের মতো তার অবস্থা হয়নি।
ব্যারিস্টার সারোয়ার বলেন, আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান চাইলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। তবে আমি উদ্বিগ্ন। নিখোঁজ থেকে ফিরে এসে অন্যরা যেভাবে নীরব হয়ে যান, ত্ব-হার অবস্থা এরকম হয় কি না। আমার মনে হয় আবু ত্ব-হার অবস্থাও তাদের মতোই হবে। হয়তো তার অবস্থা দেখে মনে হবে, তিনি নিজেই লুকিয়ে ছিলেন।