লুটপাটের মহা আয়োজন উত্তরা লেকের উন্নয়নের নামে

বর্তমান ভোটবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকারি নানা প্রকল্পে লুটপাট শুরু হয়েছে। কোন কাজই নির্দিষ্ট মেয়াদে শেষ হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, প্রকল্পের ব্যয় কয়েক দফা বাড়িয়ে এর থেকে অর্থ লুটছেন প্রকৌশলী, ঠিকাদার, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও মন্ত্রীরাও। সব শেষে নামমাত্র অর্থে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এবার উত্তরা লেকের কাজ করার জন্যও প্রথম ব্যয়ের সংশোধনী দেয়া হলো। তাতে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫৭ কোটিরওে বেশি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এ ব্যয় বৃদ্ধিকে অর্থনীতিবিদরা চুরি বলছেন। তারা বলছেন, চুরি ও লুটপার করতেই উত্তরা লেকের উন্নয়নে ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। গত আট বছরে এর ব্যয় বেড়েছে ১৫৪ শতাংশ।

মূল অনুমোদিত প্রকল্পে মোট ব্যয় ছিল ৩৭ কোটি ৩২ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এবার প্রথম সংশোধিত প্রকল্পে ৫৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। মোট প্রকল্প ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৯৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকায়।

ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য—লেকগুলো বেদখল থেকে রক্ষা করা; লেকের পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ কাজ; প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে মহানগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা; লেকের চারপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে পথচারীদের হাঁটার সুযোগ তৈরি করা; ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করা; ডাইভারশন ড্রেনেজের মাধ্যমে লেকের দূষণ প্রতিরোধকরণ ও লেকের পানির গুণগত মানের উন্নতিকরণ এবং চিত্তবিনোদন সুবিধার উন্নয়ন করা।

মূল প্রকল্পটি জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের কথা। এর পরে জুন ২০১৯ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তারপরও প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন না হওয়ায় জুন ২০২০ পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হয়। জুন ২০২০ পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ২৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বাস্তব অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য জুন ২০২৩ পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। ফলে ধাপে ধাপে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৮ বছর।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ উইং-১ এর উপপ্রধান দেবোত্তম সান্যাল বলেন, প্রকল্পের প্রস্তাবনা রাজউজ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্যদিকে রাজউক জানায় নানা কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ছে। প্রকল্পের মূল ডিপিপি প্রণয়নকালে কোনো মাষ্টারপ্লান বা স্টাডি রিপোর্ট ছিল না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের পর প্ৰণীত মাস্টার প্ল্যান, জরিপ এবং বাস্তব প্রয়োজনের ফলে লেকের পানি পরিচ্ছন্নকরণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণ, মাটি ভরাট ও তীর সংরক্ষণ কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া স্লাজ অপসারণ, অফিস ইকুইপমেন্ট, ইন্সপেকশন পিট নির্মাণ, পরিবেশগত সমীক্ষা, অফিস ব্যবস্থাপনা ব্যয়, পরামর্শক ব্যয়, ওয়াকওয়ে ও নানা স্থাপনা মেরামত ও সংরক্ষণের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাস্তব প্রয়োজনের নিরিখে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ক্যাচ পিট নির্মাণ এবং ওয়েস্ট বিন স্থাপন কাজ যুক্ত হয়েছে।বাস্তবতার নিরিখে সেতু নির্মাণ, বক্স কালভার্ট নির্মাণ, আরবরিকালচার, যানবাহন, বিদ্যমান কালভার্ট পুনর্বাসন এবং ডিওয়াটারিং অঙ্গা বাদ দেওয়া হয়েছে।
জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৬ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পটি নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে বা ৭ বছর আগে প্রকল্পটি নেওয়া হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

Sharing is caring!