বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিনের খুবই দরকার। ভ্যাকসিন সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য প্রবাসীদের প্রতি তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের দ্রুতই কনস্যুলেট অফিস এবং দূতাবাসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
গত ১৬ জুন (বুধবার) নিউইয়র্কের কুইন্সে প্রবাসীদের আয়োজিত এক আলোচনা সভার বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন এসব কথা বলেছেন।
জাতিসংঘের বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিতে নিউইয়র্কে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটি আলোচনা ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ক্লাব ইউএসএ’র সহযোগিতায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিল্পপতি জহিরুল ইসলাম ও পরিচালনা করেন সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ইফজাল চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ঘনিষ্টভাবে কাজ করার সুযোগ হওয়ায় নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুব ভালো অবস্থায় আছে। উন্নয়নের এমন ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এর মধ্যে পার্শ্ববর্তী দেশ শ্রীলঙ্কাকে দুই বিলিয়ন ডলার দিয়ে বাংলাদেশ পাশে দাঁড়িয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের তীব্র সংকট বিরাজ করছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, আমেরিকায় বহু ভ্যাকসিন মওজুদ পড়ে আছে। অনেক ভ্যকসিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এসব ভ্যাকসিন বিশেষ করে জনসন অ্যান্ড জনসনের এক ডোজের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ পেলে খুবই উপকার হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এজন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রবাসীদের আমেরিকার স্থানীয় আইন প্রণেতাদের মাধ্যমে মার্কিন সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকায় নাগরিকত্ব নিয়ে আশ্রয় নেওয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য প্রবাসীদের মার্কিন সরকারকে চাপ দেয়ারও আহ্বান জানান।
মোমেন রোহিঙ্গা সম্পর্কে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাকে এখন একটি অগ্রাধিকারের সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্বের মানবাধিকার গ্রুপগুলো খোঁজ-খবর নিচ্ছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা কোন অবস্থায়, কোন যায়গায় আছে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ে মূল সমস্যা হচ্ছে তাদের স্বদেশে মার্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তন। এ কাজে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করার জন্য আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে যে চাপ দেয়া দরকার। কিন্তু সেইরকম কোন চাপ দেয়া হচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ নিয়ে প্রবাসীদের সোচ্চার হওয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে সাংবাদিক ইব্রাহিম চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান শুরু হয়েছে। মালয়শিয়া, সৌদি আরবের প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয় প্রদানের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদেরও এমন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশের অর্থ পাচার করে কারা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, এ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে কোন তথ্য নেই উল্লেখ করে মোমেন বলেন, প্রবাসীরা এ নিয়ে তথ্য প্রদান করলে বাংলাদেশে দুদক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আয়োজক সংগঠন বাংলাদেশ ক্লাব ইউএস এর সভাপতি নুরুল আমিন বাবু, বাবরুল হোসেন বাবুল, সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সৌদ চৌধুরী, আনোয়ার কবীর। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা,আবু বকর হানিপ, শাহ নেওয়াজ, মাহফুজ হায়দার, শিবলী সাদিক প্রমুখ।