নাগরিক সম্পাদকীয়: ভিপি নুরের প্রতি যে কারণে আমাদের পূর্ণ সমর্থন

ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আলোচিত এক চরিত্র। ভিপি নুরের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের এক জন সদস্যের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একজন নারী ধর্ষণের অভিযোগ করে মামলা করেছেন এবং এই মামলায় ভিপি নুরকে অভিযুক্ত করা হয়েছে একজন সহায়তাকারী হিসেবে। অভিযুক্ত নারীর ভাষ্যমতে ভিপি নুর এই নারীকে আশ্বাস প্রদান করেও ঘটনাটির সুষ্ঠ বিচার করেন নি !

প্রশ্ন হলো: ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে যদি ভিপি নুর স্বপ্রনোদিত হয়ে বিচার করে তাহলে দেশে আইন আদালতের কোনো প্রয়োজন আছে কি? তাছাড়া এই নারীকে যেভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং তথাকথিত নারীবাদীদের দিয়ে বিবৃতি প্রদান করে সহায়তা করা হচ্ছে তাতে এই নারীর খুঁটির জোর কোথায় সেটা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধিমান হবার প্রয়োজন আছে কি?

এই দেশে ব্যারিস্টার মইনুল এর মতো ব্যক্তিত্বকে টক্ শোতে একটি নারী বিদ্বেষী বক্তব্য প্রদানের পর ক্ষমা চাওয়া সত্ত্বেও জেল এ যেতে হয়েছিল, অথচ সম্প্রতি সরকারদলীয় এমপি নিক্সন যেভাবে একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেটকে অশ্লীল ভাষায় আক্রমণ করলো সেখানে নারীর প্রতি অবমাননা হয় নি? তাছাড়া সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতা মৃনাল কান্তি দাস একটি টক্ শোতে নিলুফার চৌধুরী মনিকে নিয়ে অসৌজন্যমূলক ও অরুচিকর যে কথা বলেছে সেটা নিয়ে এইসব নারীবাদী সংগঠনকে কোনো বিবৃতি দিতে দেখা গিয়েছে কি?

বর্তমান সরকার জনগণের ভোটের অধিকার খর্ব করে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা আঁকড়িয়ে ধরে আছে। যেকোনো বিরোধী মত এবং বিরোধী কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া যেকোনো ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান কাজ, যেকাজটি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে সুচারুভাবে করে আসছে বর্তমান সরকার এবং এদের দ্বারা সৃষ্ট চাটুকার মিডিয়া। ভিপি নুরের সাথে যা হচ্ছে সেটা সরকারের এই প্রচেষ্টার ব্যতিক্রম নয়।

ভিপি নুরকে থামিয়ে দেবার কৌশল হিসেবে সরকারের প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে পরিচিত একাত্তর টিভি সাংবাদিকতার নামে যে করছে তা স্রেফ ভিন্নমতকে দমনের একটি সরকারি কৌশল মাত্র। সরকারের পথের কাঁটা ছিল বেগম খালেদা জিয়া, যিনি সুষ্ঠ নির্বাচন হলে সংখাগরিষ্টের ভোটে রাষ্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করে আজকে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন বলেই আমাদের বিশ্বাস। মামলা এবং নির্যাতনের দ্বারা বিএনপি এবং এর চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কার্যত নিঃশেষ করে দিয়েছে বর্তমান সরকার। তাই খালেদা জিয়া এবং বিএনপির এই ভঙ্গুর অবস্থায় অন্যকোনো বিরোধী মত যাতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেদিকেই নজর রাখছে এই ফ্যাসিস্ট সরকার।

ভিপি নুরের জনপ্রিয়তায় সরকার ভীত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেউ কেউ বলে থাকেন, যে সরকার খালেদা জিয়ার মতো নেত্রীকে পরোয়া করেনি তাদের কাছে ভিপি নুর কোনো বিষয় না ! যারা এমনটি ভাবছেন তারা বোকার স্বর্গে আছেন। বিএনপি সাংগঠনিকভাবে একটি দুর্বল দল এবং এই দলের সিনিয়র নেতারা তাদের সম্পদ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য সরকারের সাথে গোপনে আঁতাত করে চলে এটা এখন ওপেন সিক্রেট। তাই বিএনপি নেত্রীকে যতটা সহজে কারাগারে রাখা গিয়েছে ততটা সহজে ভিপি নুরকে রাখা যাবেনা এটা বুঝতে পেরেই হয়তো সরকার ভিপি নুরকে নানাধরণের কালিমা দিয়ে বা ঝামেলায় ফেলে গ্রেপ্তারের একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে।

ভিপি নুর বা এদেশের ছাত্র সমাজ, যারা ভিপি নুরের জন্য এবং এ দেশের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত, তারা কোনো সম্পদের পরোয়া করে না , তাদের হারাবার কিছুই নেই। যতবার এ জাতির ক্রান্তিকাল এসেছে, ততবার ছাত্রসমাজ গর্জে উঠেছে। আমরা আশা করবো এই সরকার ভিন্নমত দমনের জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লেগেছে তা পরিহার করে দেশে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে। ছাত্র সমাজের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা আগুন নিয়ে খেলার শামিল।

জনগণের ভোটে উপেক্ষা করে ক্ষমতা দখল করে রাখা এই সরকারের কাছে তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকলো আপনারা এ দেশের ছাত্র সমাজের নয়নের মনি ভিপি নুরকে নিয়ে নোংরামি পরিহার করুন। ভিপি নুর যখন আপনাদের সমালোচনা করে ,সেটা এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনের কথা হিসেবে প্রতিধ্বনিত হয়। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা চায়ের দোকানে গোপনে খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনারা জনগণের কাছে কতটা ঘৃণিত এবং ভিপি নুর কতটা জনপ্রিয়।

নাগরিক টিভি কোনো নির্দিষ্ট দল বা মতের তাবেদারী কখনো করেনি এবং কখনো করবে না। মাঝে মাঝে আমাদের কাছে কেউ কেউ লেখেন যে ভিপি নুর নাকি আওয়ামী লীগের বি টীম। কেউ কেউ বলেন ভিপি নুর নাকি ডক্টর কামালের মতো বিএনপিকে ধ্বংস করতে সরকারি এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে। যারা এসব উদ্ভট ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজে বেড়ান তাদের সম্ভবত গোল্ড ফিসের মতো স্মৃতিশক্তি!

যারা বিনা কারণে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুঁজে বেড়ান তাদের মনে করে দিতে চাই এই সেই ভিপি নুর যিনি বর্তমান সরকারের ছাত্র সংগঠনের দ্বারা ১০ বার হামলার শিকার হয়েছেন, কোমরে এবং মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এবং সরকারের দ্বারা নানা প্রলোভন তুচ্ছ করে জীবন বাজি রেখে গণমানুষের কথা বলে চলেছেন নিরন্তর, কোনো স্বার্থ ছাড়া।

ইদানিং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ লিখছেন যে আমরা নুরের মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছায়া খুঁজে পাই। নাগরিক টিভির পক্ষ থেকে আমরাও সুর মিলিয়ে বলতে চাই বঙ্গবন্ধু রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য কাজ করে হয়েছিলেন অবিসংবাদিত নেতা। নুরের মাঝেও রয়েছে সেই অবিসংবাদিত নেতা হবার সুবর্ণ সুযোগ। এই রক্তচক্ষুকে এভাবেই উপেক্ষা করে নুরকে এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে। বাঁধা হিসেবে একাত্তর টিভি এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকারীর দল থাকবেই। কিন্তু পৃথিবীতে কোনো শক্তি পারেনি বাংলার ছাত্রসমাজকে দাবিয়ে রাখতে। নুরকেও পারবে না। আমরা আছি নুরের পক্ষে। আপনি আছেন তো?

Sharing is caring!