যুদ্ধ উস্কে দিচ্ছে ইউরোপ

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনায় বসার বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছিল। সম্ভাব্য জায়গাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল তখন। এদিকে রাশিয়ান বাহিনীর হামলাও আগের তুলনায়ও তখন বেশ কমে এসেছিলো। কিয়েভের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল ইউক্রেন বাহিনী। কিন্তু ইউরোপ যেন চাচ্ছিল না এই যুদ্ধ থামুক!

তাই আজকের সকাল শুরু হবার পর ঘাপটি মেরে বসে থাকা ইউরোপের দেশগুলো ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়া শুরু করে। যাতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আলোচনা বাদ দিয়ে যুদ্ধে আগ্রহ দেখাতে শুরু করে। ফলাফল, এখনই শান্তি ফিরছে না।

রাশিয়া বলছে কিয়েভের সঙ্গে আলোচনার প্রত্যাশায় ইউক্রেনে সামরিক অভিযান সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু ইউক্রেন সরকার রাশিয়ার শর্ত মেনে আলোচনায় রাজি না হওয়ায় শনিবার আবারও ইউক্রেনে সেই অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, গতকাল বিকেলের দিকে ইউক্রেনের নেতার সঙ্গে আলোচনার প্রত্যাশায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সামরিক বাহিনীর অগ্রযাত্রা স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ‌ইউক্রেনীয় পক্ষ আলোচনায় অস্বীকৃতি জানানোয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, শনিবার বিকেলে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা আবারও শুরু হয়েছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্ভাব্য আলোচনার বিষয়ে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। কিন্তু তাতে কোনো সমাধান আসেনি।

ক্রেমলিনের এই মুখপাত্র বলেছেন, পুতিনের ওই নির্দেশে রাশিয়ার সৈন্যরা কেবল ‘জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী’, যারা নিয়মিত ইউক্রেনীয় বাহিনীর বিরোধী, তাদের সাথে লড়াই করেছে।

তবে, এর আগে শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ঘুম ভেঙেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে কিয়েভের আবাসিক ভবনে ধ্বংসযজ্ঞের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী কিয়েভের ঝুলিয়ানি বিমানবন্দরের কাছে একটি ভবনে।

কিয়েভের নগর কর্তৃপক্ষের মতে একটি ক্ষেপণাস্ত্র সেখানকার একটি আবাসিক ভবনে আছড়ে পড়েছে। আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র রাজধানীর ঝুলিয়ানি বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরিত হয়েছে বলে রিপোর্ট করেছে রয়টার্স।

রাজধানীতে, মাইডান স্কয়ারের কাছে একটি বড় ধরণের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং শহরের ত্রয়েশ্চিনা এলাকায় একাধিক বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, কিয়েভের উপর গোলা হামলার শব্দ এতোটাই তীব্র ছিল যে শহরের কেন্দ্র থেকে কয়েক মাইল দূর পর্যন্ত শব্দ পেয়েছেন তারা।

কিয়েভ ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলছে, শহরের চিড়িয়াখানার কাছে এবং শুলিয়াভকা শহরের আশেপাশে ৫০টিরও বেশি বিস্ফোরণ এবং ভারী মেশিনগানে গোলাগুলি হয়েছে।

ফক্স নিউজের সংবাদদাতা ট্রে ইংস্ট বলেছেন যে কিয়েভ ‘এই মুহূর্তে একাধিক দিক থেকে’ আক্রমণের শিকার হয়েছে।

ইউক্রেনীয় স্টেট স্পেশাল সার্ভিসের মতে, রাজধানীর ট্রয়েসচিনা এলাকার সিএইচপি-৬ পাওয়ার স্টেশনের কাছে তীব্র লড়াই চলছে। এই হামলার মাধ্যমে পুরো শহরটিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা হতে পারে।

কিয়েভের পেরেমোহি অ্যাভিনিউতে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

ভাসিলকিভের একটি বিমান ঘাঁটির কাছে তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে রাশিয়ান প্যারাট্রুপাররা কিয়েভের উপর হামলা চালানোর জন্য এই ঘাঁটিকে তাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করবে।

ইউক্রেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিক্টর লিয়াশকোর জানিয়েছেন রাশিয়ার হামলার কারণে তিন শিশুসহ মোট ১৯৮ জন ইউক্রেনীয় নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ১১১৫ জন, যাদের মধ্যে ৩৩ জন শিশু।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে রুশ সংবাদমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স ও স্পুটনিক জানিয়েছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় জাপোরিঝিঝিয়ায় মেলিটোপল শহর দখল করেছে। মেলিটোপল হল ইউক্রেনের মূল বন্দর মারিউপোলের কাছে একটি মাঝারি আকারের শহর। যেখানে অন্তত দেড় লাখ মানুষ বাস করেন।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে রাশিয়ান বাহিনী চেষ্টা করছে রাজধানী কিয়েভ পুরোপুরি দখলে নেয়ার। এরপর তারা দেশটির নেতৃত্বকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করবে।

Sharing is caring!