ইয়েমেন ইস্যুতে সৌদি জোটে ফের ভাঙন

ইয়েমেনের হুতি বিরোধী ব্রাদারহুড রিফর্ম পার্টি বা ‘আল-ইসলাহ’ দলের মানবাধিকার বিষয়ক দফতর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের তীব্র সমালোচনা করে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে বিবৃতি প্রকাশ করেছে।


সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ছয় বছর আগে ২৬ মার্চ ইয়েমেনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করে। তবে ইয়েমেনের হুথি আনসারুল্লাহ যোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর প্রতিরোধের কাছে সৌদি জোট পরাজিত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যেই তারা পৌঁছতে পারেনি। বরং ব্যাপক মতপার্থক্যের জেরে সৌদি জোটই ভেতর থেকে ধ্বংসে পড়েছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধকে কয়েকটি দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। উদাহরণ স্বরূপ দক্ষিণ ইয়েমেনে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্যকার তীব্র মতপার্থক্যের কথা উল্লেখ করা যায়।

এ বিরোধ আবুধাবি ও রিয়াদকে একেবারে মুখোমুখি অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছে। এমনকি দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এছাড়া, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের সমর্থক ইয়েমেনের ব্রাদারহুড রিফর্ম পার্টি বা আল-ইসলাহ দলের সঙ্গে সৌদি সরকারের তীব্র বিরোধ শুরু হয়েছে। এমনকি আমিরাতের সঙ্গেও ইয়েমেনের ব্রাদারহুড রিফর্ম পার্টি বা আল-ইসলাহ দলের বিরোধ চলছে।

প্রথমে সবাই এ দ্বন্দ্বের কথা গোপন রাখার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত গোপন থাকেনি। তবে প্রথম থেকেই আমিরাতের সঙ্গে এ দলের একটা টানাপড়েন ছিল। কারণ এই দলটির ব্যাপারে আমিরাত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই ভাল ছিল না এবং আল ইসলাহ সৌদি জোটের শরীক হলেও আমিরাত কখনোই এ দলের সমর্থকদের সহযোগিতা নেয়নি।

উত্তর আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুড দলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার ক্ষেত্রে সৌদি সরকার প্রথম সারিতে রয়েছে। ২০১৩ সালে মিশরে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির নেতৃত্বে মুসলিম ব্রাদারহুড দল ক্ষমতা থেকে উৎখাত হওয়ার পর সৌদি আরব একে স্বাগত জানিয়েছিল।

তবে এরপরও সৌদি সরকার ইয়েমেন যুদ্ধে ব্রাদারহুড রিফর্ম পার্টি বা আল-ইসলাহ দলের পাশে এসে দাঁড়ায়। এটাও আমিরাত ও সৌদির মধ্যে দ্বন্দ্বের অন্যতম একটি কারণ। কেননা আমিরাত দক্ষিণ ইয়েমেনে এই দলের সহযোগিতা নিতে একেবারেই রাজি নয়।

সৌদি সরকার ভেবেছিল ইয়েমেনের ব্রাদারহুড রিফর্ম পার্টি বা আল ইসলাহ’র সহযোগিতায় একদিকে জনপ্রিয় আনসারুল্লাহ যোদ্ধাদেরকে পরাজিত করতে পারবে এবং আনসারুল্লাহ ও আল ইসলাহর মধ্যে যাতে কোনো রকম আঁতাত গড়ে না ওঠে সে ব্যবস্থাও করতে পারবে।

অন্যদিকে দক্ষিণ ইয়েমেনে সৌদিপন্থী পলাতক প্রেসিডেন্ট মানসুর হাদির হাতকে আরো শক্তিশালী করা যাবে। কিন্তু সব জারিজুরি ফাঁস করে দিয়ে আল ইসলাহ দলের মানবাধিকার বিষয়ক দফতর অভিযোগ করেছে, সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী ইয়েমেনের সীমান্তবর্তী প্রদেশগুলোর জেলখানায় অবস্থিত ইয়েমেনি বন্দীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। তারা ইয়েমেনি বন্দীদের সাথে অমানবিক আচরণেরও তীব্র সমালোচনা করেছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেন যুদ্ধে একের পর এক পরাজিত হওয়ায় এবং ইয়েমেনি বন্দীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় আল ইসলাহ দলের বহু সমর্থক যোদ্ধা সৌদি জোট থেকে বেরিয়ে যায় এবং রাজধানী সানায় হুথি সমর্থক ন্যাশনাল সালভেশন সরকারে যোগ দেয়।

যাইহোক, আল ইসলাহ দল সৌদি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় সৌদি সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অপপ্রচার শুরু করেছে। রিয়াদ দাবি করেছে সানা সরকারের কাছ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ঘুষ নিয়ে পক্ষ ত্যাগ করেছে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান অবস্থা থেকে বোঝা যায় সৌদি জোট চরম ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং খুব শিগগিরি তারা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।

সূত্র: পার্সটুডে

Sharing is caring!