
এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনের লড়াই যেন ‘শেষ হইয়াও শেষ হচ্ছিল না’। বিশেষ করে ‘সাধারণ সম্পাদকের’ পদের লড়াইটা। যদিও সামনের লড়াইটা হয়েছে চিত্রনায়ক জায়েদ খান ও চিত্রনায়িকা নিপুণের মধ্যে কিন্তু পেছনে থেকে হয়েছে বড় একটা রাজনৈতিক লড়াই! আর শেষ পর্যন্ত সেই লড়াইয়ে জয় পেয়েছে নিপুণ।
নির্বাচনে ‘ভোট কেনার’ অভিযোগ তুলে নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেছেন পরাজিত প্রার্থী নিপুণ আক্তার। এই পদে পুনরায় ভোটের দাবি তুলেছিলেন তিনি। নিপুণের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জায়েদ খানের পদ বা প্রার্থিতা বাতিল হবে কিনা- সে বিষয়ে কথা বলতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার বিকেল ৫টায় এফডিসিতে মিটিং করে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ড।
আপিল বোর্ডের মিটিং শেষে জানানো হয়, জায়েদ খানের প্রার্থীতা বাতিল হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন শিল্পী সমিতির নব নির্বাচিত সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইমন সাদিক।
এ দিন আপিল বোর্ড এর মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল অভিযোগকারী নিপুণ, অভিযুক্ত জায়েদ খান, চুন্নু, সমিতির নতুন সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ও দুই নির্বাচন কমিশনারকে। তবে অভিযোগকারী নিপুণকে আপিল বোর্ডের সভায় দেখা গেলেও পাওয়া যায়নি জায়েদ খান ও চুন্নুকে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর অভিযোগকারী চিত্রনায়িকা নিপুণ আক্তারকে নিয়ে অভিযুক্ত জায়েদ খান ও চুন্নুর অনুপস্থিতিতেই হয় শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডের পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক। শনিবার বিকেল ৫টার দিকে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকটি শুরু হয়। বৈঠক শুরুর আগে এফডিসিতে অপেক্ষমাণ গণমাধ্যমকর্মীদের জানানো হয়, নিপুণের সাথে আলোচনা শেষ করে তাকে বিদায় করে দিয়ে, আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান ও সদস্য মোহাম্মদ হোসেন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে চূড়ান্ত ফলাফল জানাবেন।
এদিকে দীর্ঘদিনের সংগ্রাম শেষে আপিল বোর্ডের রায় নিজের পক্ষে আসায় আবেগাপ্লুত ছিলেন নিপুণ। আপিল বোর্ডের নতুন সিদ্ধান্ত জানানোর সঙ্গে সঙ্গেই কেঁদে উঠেন এই নায়িকা। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘সত্যের জয় হলো’।
নিপুণ আরও বলেন, আমার কাছে অনেক ডকুমেন্টস ছিল। জানুয়ারির ২৮ তারিখ থেকে আমি নির্বাচন কমিশনকে সব বিষয় জানিয়েছি, কিন্তু আমাকে হেল্প করে নাই। এবার সত্যের জয় হয়েছে। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আর কিছু বলার নাই।
অপরদিকে, আপিল বোর্ডের সভায় অনুপস্থিত জায়েদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে আপিল বোর্ডের কোনো মূল্য নেই। তারা এরকম কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না।
উল্লেখ্য, এর আগে দুই মেয়াদে চার বছর ধরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন জায়েদ খান। তখন তার সঙ্গে সভাপতি ছিলেন মিশা সওদাগর। সর্বশেষ নির্বাচনে মিশাকে হারিয়ে সভাপতি পদে বিজয়ী হয়েছেন কিংবদন্তি অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
শিল্পী সমিতির এই নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ছিল ৪২৮ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৬৫ জন। তাদের প্রদত্ত ভোটেই নতুন নেতৃত্ব এসেছে সংগঠনটিতে। নির্বাচনে ১৯১ ভোট পেয়ে সভাপতি পদে বিজয়ী হন ইলিয়াস কাঞ্চন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মিশা সওদাগর পান ১৪৮ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী জায়েদ খান পান ১৭৬ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী নায়িকা নিপুণের ভোট ছিল ১৬৩।